কর্তব্যপরায়ণতা রচনা কর্তব্যনিষ্ঠা | এসএসসি কর্তব্যপরায়ণতা মুমিনের গুণ SSC HSC Exams

“সাধারণত আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে দায়িত্ব সম্পাদন করাই কর্তব্যপরায়ণতা। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালন করতে হবে রচনা সকল শ্রেণির জন্য দেওয়া হলো এসএসসি, এইচএসসি, জেডিএস, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণিন জন্য সহজ ভাবে লেখা হয়েছে। ”

রচনা কর্তব্যপরায়ণতা

সৎসঙ্গ অথবা , সৎসঙ্গের গুরুত্ব

কর্তব্যপরায়ণতা

ভূমিকা

সাধারণত আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে দায়িত্ব সম্পাদন করাই কর্তব্যপরায়ণতা। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনার নিজের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আন্তরিক ভক্তি প্রয়োজন। অন্যথায় সেসব কাজ সমাজের জন্য ভালো নয় এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে। সমাজের অগ্রগতিতে অঙ্গীকারের গুরুত্ব অনেক। আজকের প্রতিযোগিতামূলক যুগে একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মচারীর যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়।

কর্তব্যের প্রকৃতি

মানুষের জীবন সর্বদা কর্মময়। অর্থাৎ মানুষকে পারিবারিক, পেশাগত, সামাজিক ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতে হয়। মানুষ তাদের কর্মক্ষমতা এবং ক্ষমতা অনুযায়ী এই দায়িত্ব পালন করে। পারিবারিক জীবন পরিবার পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য মৌলিক কর্তব্য অন্তর্ভুক্ত করে। সমাজের সদস্য হিসেবে তাকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করতে হয়। পেশাগত জীবনে দায়িত্ব পালন নির্ভর করে নিজের ইচ্ছার উপর। আর এই দায়িত্বগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সহায়ক। আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির সেরারূপে মানুষকে সৃষ্টি করে প্রত্যেকের ওপর কোনো না কোনো দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। মানুষের কর্মময় জীবনে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবে এটাই স্বাভাবিক।জীবনের সর্বাবস্থায় ধর্মীয় রীতি-নীতির যথাযথ অনুশীলন মাধ্যমে ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক, পারিবারিক,রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে, সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে ভূমিকা পালনের চেতনাই হল কর্তব্যপরায়ণতার মূল অঙ্গীকার। আল্লাহতায়ালা মানুষকে কর্তব্য পালনের নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন, ❝তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে। ❞

ছাত্রজীবনে কর্তব্যপরায়ণতা

ছাত্রজীবন হল পরবর্তী জীবনে সাফল্য অর্জনের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়। এর ওপর নির্ভর করে পরবর্তী জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা। তার উপর তার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নির্ভর করে। এটাই তার কর্তব্য শিক্ষার উপযুক্ত সময়। একজন শিক্ষার্থীর প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হল নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করা। ছাত্রজীবনে যারা নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালন করতে পারে তারা পরবর্তী জীবনে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করে। ছাত্রজীবন মানব মমতা লালন করার একটি শুভ সময়। এখানে তিনি জ্ঞানে পরিপূর্ণ জীবন গঠন করছেন। কর্তব্য হল তাকে জ্ঞানী ও গুণী করার পদক্ষেপ। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে তার শিক্ষক, পিতামাতা, বন্ধুবান্ধব এবং তার আশেপাশের অন্যান্য মানুষের প্রতি তার কর্তব্য পালনের মাধ্যমে কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা প্রকাশ পায়। শুধু শিক্ষা অর্জনই কারো কর্তব্য নয়।ছাত্রজীবনের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ সময়কে মানবজীবনের বীজ বপনকাল বলে অভিহিত করা হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে বীজ বপন করে যথাযথ পরিচর্যা না করলে যেরূপ কৃষক ভালো শস্য উৎপাদন করতে পারে না, অনুরূপভাবে ছাত্রজীবনে উপযুক্ত শিক্ষার বীজ বপন করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ জীবনের উন্নতি ও সাফল্য লাভের আশা করা যায় না।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চরিত্র ছাত্রজীবনে অর্জিত না হলে পরবর্তী জীবনে তা আর অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে মনীষীদের বক্তব্য হচ্ছে- আমরা সেই শিক্ষা চাই, যার দ্বারা চরিত্র গঠিত হয়, মনের বল বৃদ্ধি পায় এবং যার বলে মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। তার অন্যান্য কর্তব্য হল শিক্ষকদের আনুগত্য করা, বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়ম মেনে চলা। সঠিকভাবে পালন করা, সর্বোপরি সমাজের সকল দায়িত্ব পালনে নিজেকে নিয়োজিত করা। তবেই একজন ছাত্রের জীবন পরিপূর্ণ হয়।

পেশাগত ও ব্যবসায়িক জীবনে কর্তব্যপরায়ণতা

পেশাগত জীবনে কর্তব্যপরায়ণতা থাকলে জীবনে সফলতা নিশ্চিত। একজন ব্যক্তি যখন পেগের জীবনে প্রবেশ করে, তখন তাকে তার কর্তব্যের প্রতি সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত হতে হয়। চাকরি-ব্যবসা যাই হোক না কেন, তার ওপর বর্তায় সব দায়িত্বই তার বাধ্যতামূলক কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের অলসতা বা অবহেলা তার ভবিষ্যৎ বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। যে ব্যক্তি তার পেশাগত জীবনে বিবেকবান সে সহজেই অন্যের আস্থা অর্জন করতে পারে। কে তার কথা চিন্তা করে?

বাধাই আটকাতে পারে না। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও ঠিক একইভাবে তার কর্তব্য পালন করতে হয়। ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হলো সঠিক মূল্যে সঠিক পণ্য বিক্রয়। যে ব্যবসায়ী এ কর্তব্য পালনে ব্রত থাকে সে সকল ক্রেতাসাধারণের অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে। তার ব্যবসায়ের উন্নয়ন শুধু সময়ের ব্যাপার হয়ে থাকে।

সামাজিক জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতা

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের সমাজ। সমাজে আমাদের পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। সমাজের প্রতি একজন মানুষের প্রচুর কর্তব্য রয়েছে। এ সকল কর্তব্য তাকে অবশ্যই পালন করতে হয়। এ সকল কর্তব্যের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা, সামাজিক রীতি-নীতি মেনে চলা, সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ইত্যাদি। সমাজের প্রতি আমাদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হচ্ছে একে অপরের বিপদে সহযোগিতা করা। একজন ব্যক্তি যখন তার প্রতিবেশীদের যেকোনো বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তখন সে ব্যক্তি সমাজের অত্যন্ত কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায়। তার প্রতি সকলে সম্মান প্রদর্শন করে। তার কোনো বিপদ হলে সকলে এগিয়ে আসে। কারণ একজন কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষকে সমাজের সকল স্তরের মানুষ অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করে থাকে।

সাংসারিক জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতা

স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, মাতা ও পিতা এই নিয়ে আমাদের সংসারজীবন। সংসারজীবনে আমাদের কিছু কর্তব্য রয়েছে। এ সকল কর্তব্য যে সকল ব্যক্তি পালন করে তাকেই একজন সাংসারিক জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ বলা যায়। একজন পুরুষের সংসারজীবনে কর্তব্য হলো সংসারের প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা পূরণ করা। আর সংসারের অন্য ব্যক্তিদেরও এ কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হয়। সংসারজীবন অত্যন্ত জটিল তাই সকলের সঠিকভাবে নিজ নিজ কর্তব্য পালনেই এর ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং একটি সুখী ও সুন্দর সংসার গঠন করা যায়।

কর্তব্যনিষ্ঠার ও কর্তব্যপরায়ণতা প্রয়োজনীয়তা

দায়িত্বের সঙ্গে কর্তব্যনিষ্ঠার সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। কেননা দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করলে করণীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত না হয়ে বরং সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী যদি দায়িত্বে অবহেলা কিংবা শৈথিল্য দেখায় তাহলে সমাজে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে। ফলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে। তাই মানবজীবনে কর্তব্যনিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

কর্তব্যনিষ্ঠার ও কর্তব্যপরায়ণতা পুরস্কার

সাফল্য অর্জনই কর্তব্যনিষ্ঠার প্রধান পুরস্কার। এই সাফল্যই পরবর্তী কর্মপন্থায় উদ্দীপনা জোগায়। সত্যিকারের কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মীর কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং ত্রুটিও কম থাকে। এভাবে অন্যের আস্থাভাজন হওয়া যায়, পাওয়া যায় নতুন দায়িত্ব। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে কাজের যেমন দক্ষতা বাড়ে তেমনি যোগ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যারা পৃথিবীতে মহৎ কাজের সূচনা করেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠ। আধুনিক সমৃদ্ধিময় বিশ্ব এঁদেরই সফল অবদানের ফল।

কর্তব্যনিষ্ঠা বা কর্তব্যপরায়ণতা না থাকার ফলাফল

কর্তব্যনিষ্ঠাহীন ব্যক্তির জীবনের পরিণতি কখনো ভালো হয় না। ব্যক্তিজীবন, সংসারজীবন কিংবা ছাত্রজীবন সকল ক্ষেত্রেই কর্তব্যনিষ্ঠাহীন ব্যক্তির ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ। ছাত্রজীবনে সঠিকভাবে অধ্যয়ন না করার ফলে ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনে পড়তে হয় চরম বিপর্যয়ের মুখে, যা তাকে সাংসারিক জীবনে শুধুমাত্র দুশ্চিন্তা ও সামাজিক জীবনে অন্যদের অবলোর পাত্র হিসেবে স্থাপন করে। তাই জীবনের প্রতিটি স্তরকে সুখ ও শান্তি-সমৃদ্ধ করতে হলে কর্তব্যনিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আর জাতীয় জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা না থাকার ফলাফল আমাদের দেশের সরকার, প্রশাসন-এর দিকে নজর দিলেই বুঝা যায়। প্রতিটি বিভাগে অন্যস্থান করছে চরম কর্তব্যহীনতা। ফলে দুর্নীতি, ঘুষ, ছিনতাই, রাহাজানি, মাদক ব্যবসায় বাড়ছে সমানতালে যা দেশকে পরিণত করেছে পার সম্ভাবনাময় এক দেশ থেকে তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে। তাই প্রতিটি স্তরেই কর্তব্যনিষ্ঠা বা কর্তব্যপরায়ণতা প্রয়োজন তা না হলে কোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি সম্ভব নয়। 

উপসংহার

যিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেন, তার কাজের উপযুক্ত মূল্যায়ন হলে তিনি যেমন উৎসাহিত হন তেমনি গতি বাড়ে, উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। ব্যক্তির কর্তব্যনিষ্ঠার সার্বিক প্রভাব পড়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে। গড়ে ওঠে শান্তি চনমমিয় সমাজ। সমাজের কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধিও আসে। তাই একুশ শতকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বায়নের যুগে আমাদের উন্নতিও অনেকাংশে কর্তব্যনিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল।


কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে চাইলে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ।


বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা


আপনি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন 200 সেকেন্ড পর



বাংলা প্রবন্ধ রচনা তালিকা


সবগুলো #

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url