পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়। বিষয় পৌরনীতি ও নাগরিকতা

পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়। বিষয় পৌরনীতি ও নাগরিকতা

শিরোনাম :

“পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়”

তারিখ : ১১ ফেব্রুয়ারি , ২০২২

বরাবর

প্রধান শিক্ষক

মহারাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

বিষয় : “পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়” সম্পর্কিত প্রতিবেদন ।

জনাব , বিনীত নিবেদন এই যে , আপনার আদেশ নং ম.উ.বি ৩১৯৮-৬ তারিখ : ৯ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ . অনুসারে " পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে " হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয় " সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি নিম্নে পেশ করছি 

  পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়

১) নাগরিক ও নাগরিকতার ধারণা : 

আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে প্রাচীন গ্রিমে নাগরিক ও নাগরিকতার ধারণার উদ্ভব হয় । প্রাচীন গ্রিমে তখন নগরকেন্দ্রিক ছোট ছোট রাষ্ট্র ছিল , সেগুলোকে নগর - রাষ্ট্র বলা হতো । এসব নগর - রাষ্ট্রে যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করত তারা নাগরিক হিসেবে পরিচিত ছিল । তাদের ভোটাধিকার ছিল । তবে নগর - রাষ্ট্রে নারী , বিদেশি ও গৃহভৃত্য - এরা নাগরিক ছিল না । সময়ের পরিক্রমায় নাগরিকত্বের ধারণায় অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে । বর্তমানে নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে কোনো পার্থক্য করা হয় না । আমরা বাংলাদেশের নাগরিক । কারণ , আমরা এদেশে জন্মগ্রহণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি , রাষ্ট্রপ্রদত্ত সকল প্রকার অধিকার ( সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ) ভোগ করছি এবং রাষ্ট্রের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছি।আসলে এদের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে । নাগরিক হলো ব্যক্তির পরিচয় । যেমন- আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশের নাগরিক । আর রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি যে মর্যাদা ও সম্মান পেয়ে থাকে তাকে নাগরিকতা বলে ।


২) 

একজন সুনাগরিকের তিনটি মৌলিক গুণাবলী রয়েছে : 

ক. বুদ্ধি

খ. আত্মসংযম

গ. বিবেক বিচার

ক) বুদ্ধি : একজন সুনাগরিকের অন্যতম মৌলিক গুণ হচ্ছে বুদ্ধি ৷ বুদ্ধির পর্যাপ্ত ব্যবহারের মাধ্যমে সে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করতে পারে।বুদ্ধিমান নাগরিক উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করে , দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা , রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।নাগরিকের বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে সঠিক শিক্ষা অর্জন করা ।

খ) আত্মসংযম : একজন মুনাগরিকের আরেকটি অন্যতম গুণ হচ্ছে আত্মসংযম ৷ নাগরিককে অসৎ কার্যাবলী যেমন দুর্নীতি , স্বজনপ্রীতি , স্বার্থপরতা , পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখে মুনাগরিক হওয়ার জন্য আত্মসংযম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আত্মসংযম একজন নাগরিককে দেশ ও সমাজের সাথে কাজ করতে এবং নিয়মাবলী মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করে।আত্মসংযম অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় এবং নিজের স্বার্থের চাইতে দেশের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া শেখায়।তাই একজন সুনাগরিক কে অবশ্যই আত্মসংযম অর্জন করতে। 

গ) বিবেক বিচার : একজন সুনাগরিকের শুধু বুদ্ধিমানও আত্মসংযমী হলেই হয় না তাকে অবশ্যই বিচারের সঠিক ব্যবহার জানতে হয় । বিবেক বিচার হলো ভালো - মন্দের জ্ঞান ও দায়িত্ব কর্তব্যের জ্ঞান।বিবেক মুনাগরিকের জাগ্রত শক্তি অতত্রব নাগরিক নিজে বিবেকবান হবে অন্যদেরও বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন হতে উৎসাহিত করবে । 

৩) নাগরিক অধিকার ও অধিকারে নাগরিকের শ্রেণিবিভাগঃ 

 নিচের অপশনগুলো থেকে আমরা নাগরিকের কয়েকটি অধিকার সম্পর্কে ধারণা পাই । এ ছাড়া নাগরিক হিসেবে আমাদের আরও অনেক অধিকার আছে । শিক্ষার অধিকার পরিবার গঠনের অধিকার ভোটাধিকার অধিকার হলো সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত কতগুলো সুযোগ - সুবিধা , যা তর বিকাশ ঘটে । অধিকার ব্যতীত ভোগের মাধ্যমে নাগরিকের হয় ব্যক্তিত্বের । মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না। 

অধিকারের মূল লক্ষ্য ব্যক্তির সর্বজনীন কল্যাণ সাধন । রাষ্ট্রের নাগরিকদের মানসিক , সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য অধিকার অপরিহার্য । আমরা অনেক সময় অধিকার বলতে ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো কিছু করার ক্ষমতাকে বুঝি । কিন্তু যেমন খুশি তেমন কাজ করা অধিকার হতে পারে না । অধিকার সকল নাগরিকের মঙ্গল ও উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদান করা হয় । অধিকারের নামে আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় , যার ফলে অন্যের ক্ষতি হতে পারে ।

অধিকারের শ্রেণিবিভাগ : অধিকার প্রধানত দুই প্রকার । যথা

 ১। নৈতিক অধিকার 

২। আইনগত অধিকার । 

১. নৈতিক অধিকার : নৈতিক অধিকার মানুষের বিবেক এবং সামাজিক সাহায্য লাভের নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে আসে । অধিকার নৈতিক অধিকার । এটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় | না । যার ফলে এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই । তাছাড়া এ অধিকার ভঙ্গকারীকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না । নৈতিক অধিকার বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম হতে পারে ।

২. আইনগত অধিকার : যেসব অধিকার রাষ্ট্রের আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত , সেগুলোকে আইনগত অধিকার বলে । আইনগত অধিকারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন সামাজিক অধিকার রাজনৈতিক অধিকার অর্থনৈতিক অধিকার।

৪ ) নাগরিকেরকর্তব্য ও কর্তব্যের শ্রেণিবিভাগঃ

নাগরিকের কর্তব্য : রাষ্ট্রের নিকট নাগরিকের যেমন অধিকার রয়েছে , অনুরূপ রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে । কর্তব্য পালন ব্যতীত শুধু অধিকার ভোগ করা প্রত্যাশিত নয় । বিভিন্ন অধিকার প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিকদের নিজের প্রতি অনুগত ও দায়িত্বশীল করে তোলে । রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকারের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয় । এর বিনিময়ে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা , সততার সাথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা , নিয়মিত কর প্রদান করা , আইন মান্য করা এবং রাষ্ট্রপ্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব পালন নাগরিকদের কর্তব্য ।

কর্তব্যের শ্রেণিবিভাগ : অধিকার ভোগ করতে গিয়ে নাগরিকরা যেসব দায়িত্ব পালন করে , তাকে কর্তব্য বলে । 

নাগরিকের কর্তব্যকে দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা- 

ক । নৈতিক কর্তব্য ও 

খ । আইনগত কর্তব্য । 

ক . নৈতিক কর্তব্য : নৈতিক কর্তব্য মানুষের বিবেক এবং সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে আসে । যে নিজে শিক্ষিত হওয়া এবং সন্তানদের শিক্ষিত করা , সততার সাথে ভোট দান , রাষ্ট্রের সেবা করা এবং বিশ্বমানবতার সাহায্যে এগিয়ে আসা । এসব কর্তব্য নাগরিকদের বিবেক এবং সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে সৃষ্টি হওয়ায় এগুলোকে নৈতিক কর্তব্য বলে ।

খ . আইনগত কর্তব্য : রাষ্ট্রের আইন দ্বারা আরোপিত কর্তব্যকে আইনগত কর্তব্য বলে । রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য , আইন মান্য ও কর প্রদান করা নাগরিকের আইনগত কর্তব্য ৷ এসব কর্তব্য রাষ্ট্রের আইন দ্বারা স্বীকৃত । নাগরিকদের আইনগত কর্তব্য অবশ্যই পালন করতে হয় । এ কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে শাস্তি পেতে হয় । আইনগত কর্তব্য রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণের জন্য অপরিহার্য ।

৫ ) অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক : 

অধিকার ও কর্তব্য শব্দ দুটি ভিন্ন হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । নিমে অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক বর্ণিত হলো।

প্রথতম, অধিকার ভোগ করলে কর্তব্য পালন করতে হয় । যেমন- ভোটদান নাগরিকের অধিকার , ভোটাধিকার প্রয়োগ নাগরিকের কর্তব্য । একটি ভোগ করলে অন্যটি পালন করতে হয় । সুতরাং বলা যায় , অধিকার ভোগের মধ্যে কর্তব্য নিহিত থাকে ।

দ্বিতীয়ত , একজনের অধিকার বলতে অন্যজনের কর্তব্য নির্দেশ করে । যেমন- আমার পথ চলার অধিকার আছে- এর অর্থ আমি পথ চলব এবং অন্যজনকেও পথ চলতে দেব । আবার , আমি যখন পথ চলব অন্যজনও আমার পথ চলার সুযোগ করে দিবে । কাজেই অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। 

তৃতীয়ত , আমরা রাষ্ট্রপ্রদত্ত সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করি । তার বিনিময়ে আমাদের কর্তব্য পালন করতে হয় । যেমন- রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা , আইন মান্য করা , কর প্রদান করা ইত্যাদি কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই আমরা রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকার ভোগ করি।

চতুর্থত , সমাজের সদস্য হিসেবে আমরা শিক্ষালাভের অধিকার ভোগ করি এবং সমাজের কল্যাণে আমাদের অর্জিত শিক্ষাকে প্রয়োগ করে সমাজের উন্নয়ন করি । শিক্ষালাভ আমাদের অধিকার , অর্জিত শিক্ষা প্রয়োগ করা কর্তব্য । সুতরাং বলা যায় , অধিকার ও কর্তব্য সমাজবোধ থেকে উৎপত্তি লাভ করে।মূলত অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি ভোগ করা সম্ভব নয় । তাই বলা যায় , অধিকার কর্তব্যের মধ্যেই নিহিত ।


প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : 

' ক ' 

দশম শ্রেণি, 

রোল : ০১

মহারাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় , চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রতিবেদন তৈরির তারিখ : ১০ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ প্রতিবেদন তৈরির সময় : রাত ৮ টা ।


[বিঃদ্রঃ এই লেখাটি নিচে গিয়ে পিডিএফ ফাইনালে ডাউনলোড করতে পারবেন।]


আপনি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন 180 সেকেন্ড পর



এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url