রচনা প্রতিভা পিডিএফ ডাউনলোড করুণ। প্রতিভার সংজ্ঞা


রচনা প্রতিভা
রচনাঃ প্রতিভা

ভূমিকা

মানুষের তারতম্য নিরূপণের প্রধান মাপকাঠি হচ্ছে বুদ্ধি। বুদ্ধির পার্থক্যের মাধ্যমেই মানুষের প্রতিভার মূল্যায়ন করা হয়। ‘প্রতিভা’ শব্দটি কেবল মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সাধনা মানবজীবনের সাফল্যের মাপকাঠি হলেও প্রতিভা প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টা প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা বলেই স্বীকৃত। কাজী নজরুল ইসলাম , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , আইনস্টাইন , আলফা এডিসন প্রমুখ ব্যক্তি স্রষ্টা প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা তথা প্রতিভা নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছিলেন , এমনটি ভাববার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

প্রতিভার সংজ্ঞা

‘প্রতিভা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এর যথার্থ সংজ্ঞা নিরূপণ করা কঠিন। সাধারণভাবে বলা যায় , প্রতিভার অর্থ হলো ‘সুতীক্ষ্ম বুদ্ধি’ , ‘উদ্ভাবনী শক্তি’ ও ‘ নির্মাণক্ষম প্রজ্ঞা’। এই শক্তি সবার সমানভাবে থাকে না। তাই একই সময়ে একটা দেশে খুব বেশি প্রতিভাবান লোকের জন্ম হয় না। প্রতিভাবান ব্যক্তিরা অপূর্ব উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন প্রজ্ঞার অধিকারী হন। তার বুদ্ধির তীক্ষ্ণশক্তি নতুন নতুন জিনিস তৈরি করার উপযোগী। উপযোগী পরিবেশ প্রতিভা বিকাশে দীপ্তির ন্যায় কাজ করে থাকে। প্রতিভার সম্যক উপলব্ধিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফটবলার ব্রাজিলের কিংবদন্তী তারকা পেলের একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন ,“ সফলতা বা বিফলতা নয় , মানুষ হওয়াটাই বড় কথা । আর সবচেয়ে বড় কথা অন্যের অনুকরণ না করে স্বকীয়তা অর্জন করা।” সুতরাং , মানুষের স্বকীয়তা অর্জনের মাধ্যমেই প্রতিভা বিকাশ লাভ করে। সহজ কথায়—বিশেষ উদ্ভাবনী শক্তিকেই প্রতিভা বলা যায়।

প্রতিভা বিকাশের পথ

মানুষ বিবেক - বুদ্ধিসম্পন্ন অনুকরণীয় জীব। বুদ্ধির চর্চা মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীবে পরিণত করেছে। জ্ঞানানুশীলন ও নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায় প্রতিভা বিকাশের জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পৃথিবীতে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে , যারা স্বীয় ব্যর্থতার জন্যে তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারেন নি। বিধাতা প্রদত্ত শক্তি , বুদ্ধি ও বিবেককে যথাযথ কাজে লাগাতে না পারলে মহৎ কিছু আশা করা যায় না। প্রতিভাকে উজ্জ্বল করে বিকশিত করতে তাই প্রয়োজন হয় সাধনার। সাধনাই প্রতিভাকে উজ্জ্বলভাবে দীপ্তি দেয়। মাইকেল মধুসূদন দত্তের অপূর্ব প্রতিভার প্রকাশ ঘটেছিল বাল্যকাল থেকেই। কিন্তু স্বদেশ ও নিজ ভাষার প্রতি অনীহা তাঁর প্রতিভা বিকাশের অন্তরায় ছিল। তিনি পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাতৃভাষার শ্রীবৃদ্ধিতে এগিয়ে এসেছিলেন। দারিদ্র্যের কারণে নজরুল প্রথম দিকে প্রতিভা বিকাশের তেমন সুযোগ পান নি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে প্রতিভার বিকাশে প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। বতুত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলাই মুখ্য। প্রতিভার ক্ষেত্র অসীম ও সুদূরপ্রসারী। গভীর খনিতে যেমন হীরক লুকিয়ে থাকে এবং শ্রম ও সাধনা দিয়ে তুলে আনতে হয় , প্রতিভার স্থানও তেমনি জীবনের অতি গভীরে। সাধনা দিয়ে তাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। সুতরাং , সাধনাই প্রতিভা বিকাশের জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তা সত্ত্বেও প্রতিভা বিকাশের জন্য পারিবারিক ও আর্থ - সামাজিক আনুকূল্য একান্তই প্রয়োজন। মনীষী শেখ সাদী বলেছেন , “ বিকাশের ক্ষেত্র না পেলে প্রতিভা ও শক্তি ক্রমশ ম্লান হয়ে বিনষ্ট হয়। আগুনের স্পর্শ না পেলে ধূপ কিরূপে গন্ধ দাহ করবে ? ”

প্রতিভা বিকাশের অন্তরায়

সব দেশে সর্বকালেই কিছু লোক প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবেশ ও সাধনা দ্বারা তা বিকশিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিভা বিকাশের যথাযোগ্য পরিবেশ নেই। তাই এখানে প্রতিভাবানদের যথার্থ মূল্যায়ন হয় না। তাছাড়া বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিশেষভাবে অন্যতম। এদেশে রয়েছে চরম বেকার সমস্যা। ফলে বেকারত্ব , দারিদ্র্য ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব প্রতিভা বিকাশের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। যতদিন না আমাদের দেশ থেকে বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য দূর হবে , ততদিন পর্যন্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হবে না।

প্রতিভার দৃষ্টান্ত

প্রতিভা একটি স্বতন্ত্র গুণ। কাজেই এর অস্তিত্বও স্বতন্ত্র। সে অস্তিত্বের সফল রূপায়ণে সুন্দর পরিবেশ , পরিস্পিতি এবং সাধনা প্রয়োজন। নিরলস সাধনার দ্বারা প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে পৃথিবীতে যাঁরা অমরত্ব লাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে বিদ্যাপতি , চণ্ডীদাস , গোবিন্দদাস , মুকুন্দরাম , ভারতচন্দ্র , আলাওল , মধুসুদন , রবীন্দ্রনাথ , নজরুল ইসলাম , জয়নুল আবেদীন , শেক্সপীয়র , সক্রেটিস , প্লেটো , অ্যারিস্টটল , টলস্টয় , গোর্কি , নিউটন , মার্কোনি , এডিসন , জগদীশচন্দ্র , আলেকজান্ডার পুশকিন , মোপাসা , আইনস্টাইন উল্লেখযোগ্য । তাঁরা সবাই প্রতিভার সাথে সাধনার সমন্বয় ঘটিয়ে পৃথিবীতে আজো অম্লান হয়ে আছেন। এমন আরও অনেক ব্যক্তি আছেন , যাঁরা সাধনার দ্বারা প্রতিভাকে কার্যকর করে অমরত্ব লাভ করেছেন।

উপসংহার

সব মানুষই প্রতিভা নিয়ে জন্মায় না যুগে যুগে অল্পসংখ্যক প্রতিভাধর ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। আর সমাজ তথা দেশের অনুকূল পরিবেশ এবং সাধনার দ্বারা তা বিকাশ লাভ করে। প্রতিটি রাষ্ট্র এই প্রতিভা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সন্তানদের প্রতিভা বিকাশে মাতাপিতার দায়িত্বও কম নয়। যে জাতির মধ্যে যত বেশি প্রতিভার বিকাশ ঘটবে সে জাতি তত সমৃদ্ধি অর্জন করবে।

কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে চাইলে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ।


বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা


আপনি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন 200 সেকেন্ড পর


বাংলা প্রবন্ধ রচনা তালিকা


সবগুলো #

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
মন্তব্যগুলো দেখান
মন্তব্যগুলো যোগ করুণ

আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।

comment url