বাংলা রচনা অধ্যবসায় রচনা ছোট (১৬ পয়েন্ট)

অধ্যবসায় রচনা উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা। অধ্যবসায় রচনা ১৫, ২০ পয়েন্ট | অধ্যবসায় রচনা Class 7 6 8 9 10 SSC HSC | অধ্যবসায় রচনা ছোট ও সহজ

বাংলা রচনা অধ্যবসায়

বিষয়ঃ বাংলা রচনা অধ্যবসায় রচনা ছোট

শ্রেণিঃ Class 6 7 8 9 10 SSC HSC

ভূমিকা

কীর্তিমান ব্যক্তির যেমন মৃত্যু নেই , তেমনি নিঃশেষও নেই । এ পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব । জগতে যারা কীর্তিমান হয়েছেন , তারা প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী । সাফল্য লাভের জন্য বারবার চেষ্টা ও সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায় । যদিও মানুষ মাত্রই ভুল করে , তথাপি কোনো কাজের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে সফলতার দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে মহান প্রচেষ্টা , যে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা , তারই নাম অধ্যবসায়।

অধ্যবসায় কি

জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা হচ্ছে অধ্যবসায়।

জীবনে সফল হতে চাই একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। সফলতার পথের প্রথম এবং অনিবার্য শর্ত হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া ব্যক্তি জীবন কিংবা জাতীয় জীবন কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা কল্পনাও করা যায় না। একমাত্র অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ জীবনে চলার পথের সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে পারে।

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা

জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । মানবজীবনের যেকোনো কাজে বাধা আসতে পারে , কিন্তু সে বাধাকে ভয় করা কাপুরুষতা । যাদের মন “ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে ”, তারা সহজে সাফল্যকে করায়ত্ত করতে সক্ষম হয় না । রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন উজ্জ্বল সূর্য উদিত হয় , তেমনি অবিরাম চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের ধ্রুবতারা ।

প্রবাদ রয়েছে— “ ব্যর্থতাই সাফল্যের সোপান । " “ Failure is the pillar of success . " 

তাই ব্যর্থতায় অবদমিত না হয়ে নিরন্ত র চেষ্টা চালিয়ে গেলে এক সময় জীবনে সাফল্য আসবেই । জগতে বড় বড় শিল্পী , সাহিত্যিক , বৈজ্ঞানিক , সেনানায়ক , রাজনীতিক , ধর্মপ্রচারকদের সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী । অধ্যবসায়ী না হলে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না । এ সংসারে বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করার শক্তি যার যত বেশি , সাফল্যও তার তত বেশি এবং জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করার ক্ষমতাও তার ততোধিক ।

অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য

জীবনে সাফল্য থাকবে, জীবনে সাফল্য ব্যর্থতাও থাকবেই। দুই মিলেই হয় জীবন। সুতরাং সাফল্যে পেতে হলে যে গুনটি থাকা প্রয়োজন তা হলো অধ্যবসায়। আবার জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে তাই বলে কি সাফল্যের স্বপ্নকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলে চলবে কি, তাই হাল ছেড়ে বসে থাকা যাবে না। আমরা জানি দিনের পর যেমন রাত আসে ঠিক তেমনি আমাদের জীবনেও অনেক ব্যর্থতার পরে সাফল্য আসবেই যদি অধ্যবসায় থাকতে পারি। তাইতো কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ বলেছেন-

❝পারিব না এ কথাটি বলিও না আর, পারো কি না পারো করো যতন আবার, একবার না পারিলে দেখো শত বার।❞

অধ্যবসায় হচ্ছে,বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও সাফল্য লাভের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। অধ্যবসায়ের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন সেগুলো হলো উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা এই সব মিলে অধ্যবসায় হয়ে থাকে।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

সাফল্য একদিনে আসেনা এর জন্য অনেক প্ররিশ্রম করতে হয়। আদিম মানুষ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মাটিতে, পানিতে, আকাশে বৈরীশক্তিকে মােকাবিলা করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সফল হয়েছে। যেমন, অনাবাদি জমি আবাদ করে ফসল ফলানাে, জলাভূমি ভরাট করে নগর পত্তন, মরুভূমিকে মরূদ্যানে রূপান্তর- সবই অধ্যবসায়ের দান। আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় মানুষের যে অভাবনীয় অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা এই সব মিলিয়ে হয়েছ অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ফ্র্যাঙ্ক লয়েড উক্তিটি উল্লেখ করা যায় –

“সাফল্যের জন্য ৩টি মূল্য দিতে হবে: ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম, আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া।”

বিশ্বখ্যাত লেখক ও মোটিভেটর ডেল কার্নেগী বলেছেন –

❝ব্যর্থতার ছাই থেকে সাফল্যের প্রাসাদ গড়ো। হতাশা আর ব্যর্থতা হলো সাফল্যের প্রাসাদের দুই মূল ভিত্তি❞

যেমন একদিনে সাফল্য হয়না, তেমন আমাদের সাফল্য অর্জনের জন্য বার বার চেষ্টা করতে হবে একদিন সাফল্য হবে। জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অনেক দিতে হবে।

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়

জীবনের চলার পথে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আর এই সমস্যা মােকাবিলার উপায় অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। যে অধ্যবসায়ী নয়, তার দ্বারা কোনাে মহৎ কাজ সম্ভব নয়। কবির ভাষায়

কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ? উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ?

এ বিষয়ে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার এর উক্তিটি উল্লেখযোগ্য –

প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও , তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।

পরিশ্রম ও অধ্যবসায় এক সূত্রে গাঁথা। অধ্যবসায়হীন মানুষ পঙ্গু। জীবনে সাফল্য নিজ হাতে ধরা দেয় না। বিশ্বখ্যাত আইরিশ কবি, লেখক ও নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন –

সাফল্য একটি বিজ্ঞান। সঠিক উপাদান মেশালে তুমি সঠিক ফলাফল পাবে।

অর্থনীতি ও অধ্যবসায় 

একটি দেশের অর্থনীতি উন্নত হয় সেই দেশের মানুষ কতটা পরিশ্রমী দিচ্ছে তার উপর নির্ভির করে। কোন দেশের অর্থনীতি উন্নত তখনি হয় যখন সেই দেশের মানুষ পরিশ্রমী হয়। তাই বলা হয়, একটি দেশের অর্থনীতির কাঠামো নির্মাণ হয় ওই দেশের মানুষ দ্বারা। বিশ্বের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনুন্নত দেশের মানুষ উন্নত দেশের মানুষের চেয়ে কম পরিশ্রমী। উন্নত বিশ্বে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার পিছনে অধ্যবসায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। দেশের মানুষ যদি পরিশ্রমী বা অর্থনীতি শক্তিশালী না হয় তাহলে দেখা যায় অনেক সমস্যা। তাই একটি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে প্রয়োজন মানুষের পরিশ্রমী আর এই পরিশ্রমী হচ্ছে অধ্যবসায়।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় 

ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের উপরই নির্ভর করে জাতির আশা - আকাঙ্ক্ষা । জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য ছাত্রজীবনেই তাদেরকে অধ্যবসায়ী হতে হবে । অলস , কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনো বিদ্যার্জন কিংবা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে পারে না । অধ্যবসায়ী ছাত্র অল্প মেধাশক্তিসম্পন্ন হলেও সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয় । কাজেই অকৃতকার্য ছাত্র - ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করা উচিত । কারণ অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে ।

ড . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন— 

“কোনো কাজ ধরে যদি উত্তম সে জন হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন । " 

তাই ছাত্রদেরকে যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রতিদিনের কাজ সময়মতো এবং যথারীতি পালন করা উচিত । 

অধ্যবসায় ও প্রতিভা

অনেকের ধারণা অসাধারণ প্রতিভা ছাড়া কোনো কঠিন কাজে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয় । অথচ এই প্রতিভা অর্জিত হয় অতীত অভিজ্ঞতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে । অনেকে প্রতিভা বা মেধার উপস্থিতিকেই স্বীকার করতে চান না । নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যবসায় ছাড়া কোনো কাজে সাফল্য অর্জন করা যায় না । এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী নিউটন বলেন ,

“আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয় , বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে দুরূহ তত্ত্বগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি ।”

ফরাসি দার্শনিক ভলটেয়ার বলেছেন ,

“ প্রতিভা বলে কিছুই নেই । পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও , তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে ।”

প্রকৃতপক্ষে প্রতিভাকে অধ্যবসায়ের গুণে কাজে লাগাতে না পারলে জগতে কোনো কল্যাণই আসে না । তাই সব সময় মনে রাখতে হবে 

"Perseverance is the root of all success ."

অধ্যবসায়ের চর্চা

কোন কিছু চর্চা বাইরে না। অধ্যবসায় এমন এক চর্চা যার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে পারে। অধ্যবসায় জন্মগতভাবে লাভ করা যায় না। অধ্যবসায় অর্জন করে নিতে হয়। তাহলেই সকল কাজে আসবে সাফল্য। আমেরিকান সফল উদ্যোক্তা আর্নল্ড গ্লাসগো বলেছেন –

সাফল্যের আগুন একা একা জ্বলে না। এটা তোমাকে নিজ হাতে জ্বালাতে হবে

যে মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে আসে পৃথিবীতে সে প্রথমে হাটতে পারে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে অল্প অল্প করে হাটতে শিখে। তাই আমাদের উচিত ছোট বেলা থেকেই অধ্যবসায়ের চর্চা করা।

চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা মাও সে তুং বলেছেন –

❝সন্তানের সাফল্য চাইলে তাকে মাছ খেতে দেয়ার বদলে মাছ ধরতে শেখাও❞

তাই আমাদের প্রয়োজন অধ্যবসায় চর্চা করা। যে কোন কাজে সাফল্য অর্জন লাভের জন্য অবশ্যই অধ্যবসায় চর্চা করা।

মহাপুরুষদের জীবনে অধ্যবসায়

জগতে যাঁরা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন , তাঁদের প্রত্যেকেই অধ্যবসায়ী ছিলেন । জীবন - সংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র অধ্যবসায় । রাজা রবার্ট ব্রুস ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়েও নিরাশ হন নি ; সপ্তমবারের প্রচেষ্টায় কাঙ্ক্ষিত জয় করায়ত্ত করেন । নেপোলিয়ন , আলেকজান্ডার এসব বীর সেনানীদের যুদ্ধ জয়ের পিছনে আছে অধ্যবসায়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস । বিজ্ঞানী গ্যালিলিও , মাইকেল ফ্যারাডে , লুই পাস্তুর , মাদাম কুরি , নিউটন , আইনস্টাইন— এঁদের প্রত্যেকেই অধ্যবসায়ের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করেছেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , কাজী নজরুল ইসলাম , শেক্সপীয়র প্রমুখ সাহিত্যিকদের সফলতার পেছনেও আছে অধ্যবসায় । স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস যখন হতাশার সাগরে নিমজ্জিত , তখন ক্ষুদ্র প্রাণী মাকড়সার কাছ থেকে অধ্যবসায়ের দীক্ষা নিয়েছিলেন । জর্জ বার্নার্ড শ ' - এর লেখক জীবনের সূচনা ছিল অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক । শেষ পর্যন্ত অধ্যবসায়ই তাঁকে এনে দেয় বিশ্বখ্যাতি । আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( স ) ত্যাগ - তিতিক্ষা ও অধ্যবসায়ের অনুপম দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন ।

নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন-

Impossible is a Word, Which is Only Found in The Dictionary of Fools

অন্যদিকে তুষারাচ্ছন্ন আল্পস পর্বত লংঘন করার প্রাক্কালে ফরাসি সেনাপতিরা নিরুৎসাহ বোধ করলে নেপোলিয়ান সদর্পে বলেন—

 “ There shall be no Alps . " 

অধ্যবসায়হীনতার কুফল

'Life is not a bed of roses' , অর্থাৎ ' জীবন পুষ্পশয্যা নয় । অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে । আমাদেরকে সুখের স্বর্গ রচনা করতে হয় । জীবনের কোনো মহৎ কর্মই ত্যাগ - তিতিক্ষা ও দুঃখ - কষ্ট ছাড়া সফল হয় না । অধ্যবসায়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় জীবন অকালে শেষ হয়ে যায় । অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জগতের কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করতে পারে না । তার জীবন ধ্বংস হয় , ব্যর্থ হয় । তার স্মৃতি হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতল গর্ভে । অনেক প্রতিভাধর ব্যক্তি শুধুমাত্র অধ্যবসায়ের অভাবে জীবনে কোনো অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে এ্যাপল কম্পিউটার্স এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস বলেছেন —

❝রাতারাতি সাফল্য বলতে কিছু নেই। মনোযোগ দিলে দেখবে সব সাফল্যই অনেক সময় নিয়ে আসে❞

অধ্যবসায়ের অপব্যবহার নিয়ে আমেরিকান লেখক ও কবি হারমান মেলভির উক্তিটি যথার্থ –

“অসত্যের পথে সফল হওয়ার চেয়ে, সত্যের পথে ব্যর্থ হওয়াও ভালো”

অধ্যবসায় ও সফলতা

অফুরন্ত সৌন্দর্যের ক্ষণস্থায়ী এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী । ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য । মৃত্যুর ধ্বংসলীলার মাধ্যমে মানুষের নিথর দেহের বিলুপ্তি ঘটলেও তার মহৎ কর্মের সুরভি কখনো শেষ হবার নয় । যে লোক বিফলতার তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজে অগ্রসর হয় , সফলতা তার জন্য নিশ্চিত । অবিচলিত অধ্যবসায়ের দ্বারা সফলতার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছা অসম্ভব কিছু নয় । একমাত্র অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই মানবজীবনে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করা যেতে পারে । কর্মের সুফল ও খ্যাতির আলোকবর্তিকায় সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠার জন্য অধ্যবসায়কে কন্ঠের হার করে নিতে হবে ।

অধ্যবসায়ের শিক্ষা 

আমরা যদি বিশ্বজুড়ে উন্নত দেশ এবং সফল ব্যক্তিদের লক্ষ্য করি তবে দেখবো ব্যক্তিদের মধ্যে একটি ধারাবাহিক প্রবণতা রয়েছে এবং সেই ধারাটি হল অধ্যবসায়ের ক্ষমতা। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন –

“The greatest glory in living lies not in never falling, but in rising every time you fall.”

জীবনে ব্যর্থতা থাকবে না এমন টা ভাবার সুযোগ নেই। কারণ জীবন থেমে থাকে না। জীবন চলমান নদীর মতো। তাই জীবনে ব্যর্থতা দেখে পিছু পা হলে সাফল্য লাভ করা যাবে না। বিশ্বখ্যাত লেখক ও ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন বলেছেন –

“জীবনে সফল হতে চাইলে দু’টি জিনিস প্রয়োজন: জেদ আর আত্মবিশ্বাস”

অধ্যবসায়ের মূল শিক্ষা হলো বার বার ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর সাফল্যের স্বপ্ন দেখা।

অধ্যবসায় ও বাঙালি জাতি

আমরা এমন এক বাঙাল জাতি যার মাধ্যমে কোন অধ্যবসায় নাই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা বাঙালির মধ্যে অধ্যবসায়ের গুনটি অনেকটাই নেই। আমাদের মধ্যে নেই কোনো প্রচেষ্টা, নেই পরিশ্রম করার প্রবনতা, নেই সাফল্য লাভের ইচ্ছা। বিশ্বখ্যাত লেখক ও মোটিভেটর ডেল কার্নেগী বলেছেন –

❝যার মাঝে সীমাহীন উ‌ৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে, তবে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।❞

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়

ব্যক্তি মিলে গঠিত হয় পরিবার আর কতগুলো পরিবার সমাজ এবং গোটা সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হলো রাষ্ট্র । জাতীয় জীবনে তথা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে সার্বিক উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে অধ্যবসায় । যে জাতি অলস , কর্মবিমুখ ও উদ্যমহীন , সে জাতি প্রতিযোগিতামুখর পৃথিবীতে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য । পৃথিবীতে অনেক জাতি সম্পদের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অধ্যবসায়ের গুণে , জ্ঞানে ও ধনে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে । জাপান , জার্মানি এবং অতিসম্প্রতি মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশ কেবল অধ্যবসায়ের গুণে উন্নতির পথে ধাবিত হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায়ী জাতি ব্যক্তিক ও রাষ্ট্রিক উন্নতির পথে কার্যকরী অবদান রাখতে সক্ষম হয় ।

উপসংহার 

মহাকালের অনন্ত প্রবাহে মানুষ পায় এক সীমাবদ্ধ জীবন । এ যেন “অনন্ত ঘুমের মধ্যে ক্ষণিকের জন্য চোখ মেলে তাকানো । ” ক্ষণকালের এ জীবনে মানুষ স্মরণীয় - বরণীয় হয়ে ওঠে নিজের কর্মফলের মাধ্যমে । যারা সংকল্পে অটল , অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী তাদের অসাধ্য কিছুই নেই । যে ব্যক্তি পুনঃ পুনঃ চেষ্টার মাধ্যমে অধ্যবসায়ের কণ্টকিত পথ থেকে বিচ্যুত হয় না , তার জীবনেই সফলতার সৌরভমণ্ডিত পুষ্প ফোটে । একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানবজীবন সাফল্যমণ্ডিত হয় এবং স্মরণীয় ও বরণীয় হিসেবে অধ্যবসায়ীর নাম ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয় স্বর্ণাক্ষরে ।

ভারতীয় পন্ডিত, সাধক, ও লেখক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন –

❝একটি লক্ষ্য ঠিক করো। সেই লক্ষ্যকে নিজের জীবনের অংশ্ বানিয়ে ফেলো। চিন্তা করো, স্বপ্ন দেখো। তোমার মস্তিষ্ক, পেশী, রক্তনালী – পুরো শরীরে সেই লক্ষ্যকে ছড়িয়ে দাও, আর বাকি সবকিছু ভুলে যাও। এটাই সাফল্যের পথ।❞

 

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url