বাংলা রচনাঃ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ / তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ

বাংলা রচনাঃ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ / তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ

তথ্য প্রযুক্তির বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রচণ্ড শক্তিশালী প্রযুক্তি হওয়া সত্ত্বেও এটাকে সাধারণ মানুষের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সহজেই দূরত্বকে জয় করতে পারছে। তাৎক্ষণিকভাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শব্দ, ছবি ও লেখা আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ / তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ রচনা সকল শ্রেণির জন্য দেওয়া হলো এসএসসি, এইচএসসি, জেডিএস, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণিন জন্য সহজ ভাবে লেখা হয়েছে। ”

‘আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশর’

ভূমিকা

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে অল্প সমায়ে দ্রুত কাজ এবং যোগাযোগ করা অনেক সহজ হয়েগিয়েছে। বিংশ শতাব্দীর ধ্যান-ধারণা, নীতি, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যকার সহজ সম্পর্ক সৃষ্টিতে তথ্যপ্রযুক্তি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ধরন, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ সবকিছুই একবিংশ শতাব্দীতে এসে একটি নাটকীয় পরিবর্তনের মুখে পড়েছে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে। তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি এদেশের মানুষের জীবনকে আমূল বদলে দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজকের দুনিয়া একটি বিশ্বগ্রামে পরিণত হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য:

তথ্য প্রযুক্তির বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রচণ্ড শক্তিশালী প্রযুক্তি হওয়া সত্ত্বেও এটাকে সাধারণ মানুষের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সহজেই দূরত্বকে জয় করতে পারছে। তাৎক্ষণিকভাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শব্দ, ছবি ও লেখা আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এটা এমন এক প্রযুক্তি, যা পৃথিবীর যেকোনো দেশের মানুষ আয়ত্ত করতে পারে এবং এক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এর দ্বারা সৃষ্ট নতুন কর্মক্ষেত্রগুলোর অধিকাংশই গরিব দেশগুলোর জন্যে বিশেষভাবে উপযোগী। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট কাজ করার জন্যে কাউকে শহরের দিকে ছুটতে হবে না; বরং যেখানে আছে সেখান থেকেই নতুন ধরনের উপার্জনশীল কাজে শরিক হতে পারবে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অশিক্ষিত লোকদের জন্যে ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে কোনো বাধা নেই।

বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা :

তথ্য প্রযুক্তির ফলে সফটওয়্যার রপ্তানি ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বহু পথ খুলে যাবে। এর মূল ভিত্তি হচ্ছে যয় পারিশ্রমিক সম্পন্ন প্রশিক্ষিত জনবল। এ ব্যবসায় যত বেশি স্বল্প পারিশ্রমিকসম্পন্ন প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টি করা যাবে, তত বেশি কাজ বিদেশ থেকে আনা সম্ভব হবে। জনবল সৃষ্টি করা কোনো সমস্যা নয়। চাহিদা সৃষ্টি হলে সেই সুযোগ গ্রহণ করার উপযুক্ততা সৃষ্টি করতে মোটেও বিলম্ব হবে না। পৃথিবীব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে পরিমাণ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসা হচ্ছে, ব্যবসাও যদি আমাদের দেশে নিয়ে আসার যোগ্যতা অর্জন করা যায়, তাহলে এদেশের মানুষের কর্মসংস্থানের রিমণ্ডলে নানা পেশায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। নিজেদের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে পারবে।

বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি:

বর্তমান পৃথিবীর অগ্রসরের সাথে তথ্য প্রযুক্তির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশের উপর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকার হাতে নিয়েছে “রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ”। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে-

☞ ইনোভেশন ফান্ড:

রাষ্ট্রীয় সেবার মান উন্নয়নে গঠন করা হয়েছে “ইনোভেশন ফান্ড”। সেবামূলক এই কর্মকান্ডের আওতায় রয়েছে গ্রামীণ উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, তথ্যে প্রবেশাধিকার, বাংলা ভাষা সহায়ক সফটওয়্যার ইত্যাদি।

☞ বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা:

২০১৪ সালের বাংলা নববর্ষের (১৪২০) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো পৃথিবীর প্রথম এবং পূর্ণাঙ্গ বাংলা সার্চ ইঞ্জিন “পিপীলিকা” এটি পূর্ণাঙ্গ সার্চ ইঞ্জিন ২০ কোটির বেশি মানুষকে বাংলা তথ্য খোঁজায় সহায়তা করবে।

☞ তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক বা থ্রিজি:

থ্রিজি হলো থার্ড জেনারেশন বা তৃতীয় প্রজন্ম। ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বহুল প্রত্যাশিত থ্রিজি সেবা চালু করার লক্ষ্যে দেশের চারটি মোবাইল অপারেটরকে থ্রিজি লাইসেন্স দিয়েছে সরকার, থ্রিজি প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় দিক হল এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধাসহ ভয়েস কলের পাশাপাশি ভিডিও কলও করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ফোর জি সেবা চালু আছে।

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে করণীয় :

তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের জন্যে টেলিফোন ও ইন্টারনেট কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির আগমনকে দ্রুত ও নিশ্চিত করতে হলে টেলিফোন সার্ভিসকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিটিটিবি-কে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত এবং ফিক্সড্ টেলিফোনের' খাতকে বেসরকারি খাতের উন্নয়নের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হলে টেলিফোন দরকার। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে আগ্রহী হলে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের দেশে অবিলম্বে টেলিফোনের আন্তর্জাতিক সংযোগ ব্যবস্থা (ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে)-কে উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে দেশের যেকোনো ব্যবসায়ী এ ব্যবসাকে আইনসম্মতভাবে পরিচালনা করতে পারে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্যবসায় যথেষ্ট গতি সঞ্চার হবে এবং তা দেশের জন্যে অসামান্য সুফল বয়ে আনবে।

ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলে বাংলাদেশ:

এটি এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সারাবিশ্ব তথ্য আদান প্রদান করে থাকে। খুব দ্রুত গতিতে তথ্য আদান প্রদান করার বেষ্টা অপশান ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল। এর মাধ্যমে আমার খুব কম সময় তথ্য আদান প্রদান এবং বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ভালো উপযোগী একটি মাধ্যমে। ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল দিয়ে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল সমুদ্র তলদেশ দিয়ে এক দেশের সাথে আরেক দেশর ত্যথ আদান প্রদান করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র তলদেশ দিয়ে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে। খুব দ্রতু ও ঠিক ভাবে তথ্য আদান প্রদান করার জন্য ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেটের বিস্তার :

টেলিফোন ও ইন্টারনেট যত সস্তা হবে, এগুলো তত বেশি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় তথা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাবে। মানুষ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ নিজ সমস্যা সমাধান করে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবে। সুতরাং, সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত তথ্যপ্রযুক্তির জন্যে বেসরকারি খাতকে অবকাঠামো গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা। তথ্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো স্থাপন ও পরিচালনা থেকে কর সংগ্রহ করে রাজস্ব বৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্য হওয়া মোটেই উচিত হবে না। সরকারের লক্ষা হতে হবে দ্রুত সম্প্রসারণকে উৎসাহ প্রদান এবং অধিকতর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি। সরকার এ নীতি অনুসরণ করলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসবে।

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার :

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাণিজ্য ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে জনসাধারণের জন্যে বহু সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্যে কাউকে স্কুল-কলেজ পাস করতে হবে না বলে তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রযুক্তিতে সকলকেই কাজে লাগানো যাবে। যে অশিক্ষিত লোকটি জীবনে কোনোদিন তথ্যপ্রযুক্তির কথা শুনে নি সেও নির্ভয়ে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। বর্তমান প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জ্ঞানকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট, শুধু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এটাকে দাঁড় করাতে পারলেই হলো। সাবমেরিন ক্যাবল-এর অভাব, টেলিফোনের অপ্রতুলতা, ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যান্ড উইথ'-এর অপর্যাপ্ততা অতিক্রম করতে পারলেই এমন অনেক কিছু নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে। 'রেলওয়ে ফাইবার অপটিক' ব্যবহারের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, সেসব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে একটি মহাশক্তিশালী সম্পদকে সকল মানুষের ব্যবহারের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির জন্যে এটি একটি বিরাট মুক্তি। এর ফলে দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী দেশের যেকোনো স্থানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরস্পর মুখোমুখি মিটিং করতে পারবেন নিজস্ব দপ্তরে বসেই। ঢাকা শহরের চিকিৎসক অন্য শহরে অবস্থানরত রোগীর চিকিৎসা করতে পারবেন। ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা ধীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই দেশের সর্বত্র ছড়ানো ছিটানো অসংখ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে মুখোমুখি আলাপ করে ব্যবসার খোঁজ-খবর নিতে পারবে, কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে

উপসংহার

তথ্য প্রযুক্তির প্রবাহের সাথে সংগতি রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি। তবে একথা সত্যি যে এগিয়ে চলার এ গতিটা মোটেই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে যথেষ্ট নয়। ইন্টারনেট সার্ভিসকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া এখন আগের চাইতে অনেক সহজ। তবে জনসাধারণকে আরও ব্যাপকভাবে এর আওতায় আনা সম্ভব হলে তথ্য প্রযুক্তির আশীর্বাদ সর্বজনীন হয়ে উঠবে।


কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ।


বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা


আপনি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন 200 সেকেন্ড পর



বাংলা প্রবন্ধ রচনা তালিকা


সবগুলো #

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url