বাংলা রচনাঃ চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান সকল শ্রেণির জন্য

চরিত্র (১৬ পয়েন্ট)

“বিজ্ঞানের আশীর্বাদ আজ সর্বব্যাপী। স্বাস্থ্য পরিচর্যায়ও বিজ্ঞানের অবদান আজ বিস্ময়কে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবিষ্কার চিকিৎসা ব্যবস্থায় এনে দিয়েছে যুগান্তকারী বিপ্লব। ফলে যেসব রোগ এক সময় দুরারোগ্য বা নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ বলে বিবেচিত হতো সেগুলো আজকের দিনে অতি সহজেই নিরাময়যোগ্য বলে প্রমাণিত রচনা সকল শ্রেণির জন্য দেওয়া হলো এসএসসি, এইচএসসি, জেডিএস, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণিন জন্য সহজ ভাবে লেখা হয়েছে। ” বাংলা রচনাঃ চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান সকল শ্রেণির জন্য JSC SSC HSC

‘চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান’

ভূমিকা

বিজ্ঞানের আশীর্বাদ আজ সর্বব্যাপী। স্বাস্থ্য পরিচর্যায়ও বিজ্ঞানের অবদান আজ বিস্ময়কে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবিষ্কার চিকিৎসা ব্যবস্থায় এনে দিয়েছে যুগান্তকারী বিপ্লব। ফলে যেসব রোগ এক সময় দুরারোগ্য বা নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ বলে বিবেচিত হতো সেগুলো আজকের দিনে অতি সহজেই নিরাময়যোগ্য বলে প্রমাণিত। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কল্যাণে পৃথিবীতে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের গড় আয়ু।

আধুনিক চিকিৎসার সূত্রপাত :

 আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে মানুষের ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন এসে। বিজ্ঞানের বদৌলতে প্রাচীন পদ্ধতির কবিরাজী চিকিৎসার স্থলে হোমিওপ্যাথিক ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভাবন করা পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্টেপটোমাইসিন ইত্যাদি ওষুধ আবিষ্কারের ফলে মানুষ গাছ-গাছালি, তাবিজ-কবজ ও ঝাড়ফুঁকের মতো কুসংস্কারের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এসব চিকিৎসা ব্য আধুনিক বিজ্ঞানেরই বিস্ময়কর অবদান। 

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্য :

বিজ্ঞান চিকিৎসাক্ষেত্রে নানাভাবে অগ্রগতি এনে দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রোগ নির্ভ প্রতিরোধ বা প্রতিষেধক, রোগ নিরাময় ও পুষ্টি বিধান ।

রোগ নির্ণয় :

 বিজ্ঞানের কল্যাণে আধুনিক রোগ নির্ণয় ব্যবস্থায় এসেছে বিস্ময়কর বিপ্লব। আগেকার দিনে রোগের চিকিৎসা করে অনুমানের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনস্টিক ব্যবস্থায় কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম ও জীবাণু শনাক্তকরণের উন্নত ব্যবস্থা দ্বারা মানবদেহের যেকোনো রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সু অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও দেহাভ্যন্তরস্থ সূক্ষ্ম ত্রুটি-বিচ্যুতিও আজকের ডায়াগনস্টিক সিমে এর কল্যাণে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বর্তমানে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় ব্যবস্থায় বাংলাদেশে অবস্থান করেও যেকোন রোগী ইউরোপ-আমেরিকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা : 

বিজ্ঞান শুধুমাত্র রোগ নির্ণয় ও রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী বিপ্লব সাধন করো নি, রোগ প্রতিরোধে জন্যেও বয়ে এনেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। ফলে এখন আর যখন-তখন মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় না। নানা ধরনের টিকার আবিষ্কার মানবদেহের ভেতরেই রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করার বিস্ময়কর শক্তির যোগান দিচ্ছে। বিসিজি টিকার আবিষ্কার যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে বিস্ময়কর সাফল্য এনে দিয়েছে। তাছাড়া হাম, বসন্ত, পোলিও, জলাতংক প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে টিকা কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় হাম, পোলিও, ডিপথেরিয়া, বসন্ত প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে শিশুদের ডিপিটি টিকা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এইডস্ তথা এইচআইভি জীবাণু প্রতিরোধকারী টিকা আবিষ্কারের জন্যে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রোগ নিরাময় ব্যবস্থা :

বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের দুরারোগ্য রোগ আজ নিরাময়যোগ্য হয়ে উঠেছে। আগে বলা হতো, 'যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা'। কিন্তু বর্তমানে মাত্র কিছুদিন ওষুধ সেবনেই যক্ষ্মা রোগ সেরে যায়। কলেরা বা ডায়রিয়ায় আগে বাংলাদেশে গ্রামের পর গ্রাম জনমানবশূন্য হয়ে পড়ত। কিন্তু বর্তমানে কলেরা ও ডায়রিয়া আর দুরারোগ্য কোনো ব্যাধি নয়। কলেরার জীবাণুই পৃথিবী থেকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের দেশেই আবিষ্কৃত হয়েছে বিনাকর ওআরএস বা খাবার স্যালাইন। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানাজনিত পানিশূন্যতা দূর করতে খাবার স্যালাইন অত্যন্ত কার্যকর। পেনিসিলিন ও এসপিরিন ওষুধ দুটির আবিষ্কার চিকিৎসাক্ষেত্রে এনে দিয়েছে বিস্ময়কর বিপ্লব। এসপিরিনকে বলা হয় সর্বরোগের ওষুধ। পেনিসিলিনও মানবধ্বংসী কয়েকটি গুরুতর রোগ থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করেছে। রোগ নিরাময়ের প্রয়োজনীয় ওষুধ খুবই সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে মানুষ আর রোগ যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে মরে না।

শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিরাময় :

সমনের বিবর্তনে পৃথিবীতে দেখা দিয়েছে নানাপ্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি। এগুলো ওষুধে নিরাময় হয় না। আধুনিক বিজ্ঞানও বসে থাকে নি। শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক রোগ ও শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বের হয়েছে। বর্তমানে বাইপাস সার্জারি ছাড়াও কৃত্রিম হূৎপিণ্ড সংযোজন করে মানুষকে কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। একজনের অঙ্গ- প্রত্যক্ষা অন্যজনের দেহে সংযোজন করা হচ্ছে। প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে চেহারার বিকৃতি ও ক্ষত সারিয়ে তোলা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় অস্থি ভেঙে গেলেও শল্য চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা যায়। সর্বাধুনিক চিকিৎসায় অপারেশন ছাড়াই লেপারোস্কোপির সাহায্যে শরীরের যেকোনো পাথর গলিয়ে বের করা যায়।

পুষ্টি বিধান :

পুষ্টি ছাড়া মানুষের সুস্বাস্থ্য প্রত্যাশা করা যায় না। আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় মানুষ খাদ্য, পুষ্টি ও পুষ্টির উৎস সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছে। স্বাস্থ্য পরিচর্যা, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন জীবন নিশ্চিত করেছে বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিশুদ্ধ। পানি সংগ্রহের জনো বৈজ্ঞানিক কল ব্যবহার করা হয়। পানি বিশুদ্ধ করতে পিউরিফিকেশন ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয়, যা বিজ্ঞানেরই অবদান। পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্যেও আধুনিক উপকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে কৃত্রিম উপায়ে প্রোটিন বা ভিটামিন-

তৈরি করা হয়। খাদ্যের ক্যালরি নির্ধারণ ও মানুষকে প্রয়োজনীয় ক্যালরি প্রদানের ব্যবস্থা ও পুষ্টিবিজ্ঞান নিশ্চিত করেছে।

ব্যর্থতা :

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ঈর্ষণীয় সাফল্য সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও উল্লেখযোগ্য। এইডস্ রোগের কোনো চিকিৎসা এখনও বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেন নি। ক্যান্সারও আজ পর্যন্ত নিরাময়যোগ্য হয় নি। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগসমূহ আধুনিক চিকিৎসা বা ওষুধে পুরোপুরি নিরাময় হয় না। আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। অনেক ওষুধ মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং অবৈধ ড্রাগের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

উপসংহার

বিজ্ঞান মানুষের জন্যে এক মহান আশীর্বাদ। চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষের জন্যে বয়ে এনেছে যুগান্তকারী কল্যাণ। যদিও নতুন নতুন প্রাণঘাতী রোগের আবির্ভাব বিশ্ববাসীকে বিপন্ন করে তোলে, তা সত্ত্বেও মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য এখন অনেক বেশি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত।


কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে চাইলে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ।


বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা


আপনি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন 200 সেকেন্ড পর


বাংলা প্রবন্ধ রচনা তালিকা


সবগুলো #

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url