সাম্প্রদায়িকতা ছোট রচনা | সাম্প্রদায়িকতা কি

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রধাণত দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। একটি হচ্ছে হিন্দু অপরটি হচ্ছে মুসলিম। ভারতীয় ব্রিটিশ শাসন অর্জিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের সধ্যে সাংস্কৃতিক ও জাতীয় ঐক্য সম্প্রতি বজায় ছিল । কিন্তু ভারতে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হলে তা নষ্ট হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে প্রকট বৈষম্য দেখা দেয়। হিন্দু ও মুসলমানরা ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যায়। একে অন্যের পরিপূরক না ভেবে শত্রু ভাবা আরম্ভ করে । ফলে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় সাম্প্রদায়িক জাতীয়তা। মুসলমানরা তাদের ধর্মের ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে ইসলামী জাতীয়তা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে হিন্দুরাও তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনকে কেন্দ্র করে হিন্দু জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করে।

সাম্প্রদায়িকতা কি

সাম্প্রদায়িকতা সাধারণভাবে বলতে ধর্মের নামে ধর্মতিরিক্ত লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য কাজ করাকে বুঝায়। সাম্প্রদায়িকতা এক ধরনের মনোভাব। কোন ব্যক্তি সে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে। ধর্মনিষ্ঠার সাথে সম্পর্ক আছে ধর্মীয় তত্ত্ব এবং আচার বিচারের।

সাম্প্রদায়িকতা বলতে কি বুঝায়

সাধারণভাবে সাম্প্রদায়িকতা বলতে ধর্মের নামে ধর্মতিরিক্ত লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য কাজ করাকে বুঝায়। এরূপ সাম্প্রদায়িকতা সম্পন্ন কোন সম্প্রদায় ধর্মকে ধর্মান্ধতায় রূপান্তর করে এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের কাজে আত্মনিয়োগ করে। তাই সাম্প্রদায়িকতা কথাটিকে বিভিন্ন অর্থে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করা হয়। সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন লোকেরা মনে করেন যে, তাদের ধর্মের অনুরাগীদের সকল স্বার্থ অভিন্ন এবং তা অন্য সম্প্রদায় থেকে পৃথক। এ সকল লোকেরা ধর্মীয় বিশ্বাসকেই সমাজ ও রাজনীতির ভিত্তি বলে মনে করে থাকেন। তাছাড়া সাম্প্রদায়িকেরা সাম্প্রদায়িক মতে বিশ্বাস করে বিধায় তারা ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দেশের জনগনের ঐক্য স্থাপনকে সমর্থন করে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যা হচ্ছে ব্রিটিশদের দ্বারা সৃষ্ট একটি সমস্যা। ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করার জন্য ব্রিটিশরা সুকৌশলে হিন্দু ও মুসলমানদেরকে উভয়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। যার ফলে এতদিন একসাথে বসবাসকারী হিন্দু ও মুসলমানগণ একে অপরের শত্রু ভাবতে থাকে। শুরু হয়ে যায়। সাম্প্রদায়িকতা। পরবর্তীতে নানা কারণে এই সাম্প্রদায়িকতা তীব্র আকার ধারণ করে। যা শেষ পর্যন্ত অখণ্ড ভারত বর্ষকে খণ্ডিত করে ফেলে। পরবর্তীতে হিন্দু এবং মুসলমানরা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুটি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।

সাম্প্রদায়িকতার কুফল

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-“ধর্মের ব্যাপারে কোনাে জবরদস্তি নেই।”

পৃথিবীর কোনাে ধর্মে বা ধর্ম গ্রন্থে অন্যের উপর নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব চাপিয়ে দেওয়ার বিধান নেই। তারপরও একদল স্বার্থান্ধ উগ্র মানুষ বিভিন্ন স্লোগান তুলে অন্যের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করতে চায়। কৃষ্ণাঙ্গদের উপর শ্বেতাঙ্গদের প্রভুত্ব কায়েমের চেষ্টা সাম্প্রদায়িকতার ধারাবাহিক অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের দ্বারা ইহুদি নিধনযজ্ঞ সাম্প্রদায়িকতারই অন্য নাম। ভারতীয় ব্রিটিশ শাসন অর্জিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের সধ্যে সাংস্কৃতিক ও জাতীয় ঐক্য সম্প্রতি বজায় ছিল । কিন্তু ভারতে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হলে তা নষ্ট হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে প্রকট বৈষম্য দেখা দেয়।

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url