বাংলা রচনাঃ বাংলাদেশে বনায়ন | পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন | HSC SSC JSCu

 

বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন | poribesh songrokkhon bonayon rochona
বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন

বাংলাদেশে বনায়ন,
পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন

বাংলা রচনাঃ বাংলাদেশে বনায়ন |অথবা, পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন |অথবা, অরণ্যের শোভা |অথবা, দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর |অথবা, বনায়ন | poribesh songrokkhon bonayon rochona

বিষয়ঃ এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার | JSC SSC HSC Class 6 7 8 9 10


ভূমিকা

পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন এর ভূমিকা অনেক গুরুত্ব  সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থান, ভূমিরূপ ও আবহাওয়ার কল্যাণে বাংলাদেশ একটি চিরসবুজের লীলাভূমি। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেন্দ্রিক নানামুখি কারণে আমাদের দেশে বৃক্ষনিধন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। সরকার দেশকে পুনরায় সবুজে ভরিয়ে দেবার মানসে বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বনায়ন কর্মসূচি একটি মহৎ উদ্যোগও বটে।

সবুজের আদি উৎস

মন-মাতানো সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির উৎস এ অরণ্য। শূন্য প্রান্তর ও ধূ-ধূ মাঠকে সবুজে ভরে দিয়েছে বৃক্ষ। দুরন্ত সাহস নিয়ে বৃক্ষলতা দুর্গম পাহাড়, পর্বত, সমুদ্রের ভয়াবহ তরঙ্গমালা- সব পেরিয়ে সবুজের সমারোহ এনে বৃক্ষই এ পৃথিবীতে প্রাণের আবাদ করেছে। ধূলির ধরায় জীবনের বিজয়কেতন, যা সবুজ বনানীতে আশ্রিত, তা উড়িয়েছে বৃক্ষই। কবিগুরুর ভাষায়-

"বিজয় আখ্যানলিপি লিখে দিলে পল্লব-অক্ষরে ধূলিরে করিয়া মুখ, চিহ্নহীন প্রান্তরে প্রান্তরে।"

বৃক্ষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

মানবজীবনে বৃক্ষের উপকারিতা অনস্বীকার্য। আমাদের খাদ্যের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে গাছ। গাছের ফল মানবদেহের পুষ্টি যোগায়। গাছের কাঠ থেকে ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, নৌকা, গাড়ি, ট্রাক, স্টিমার, লঞ্চ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কাগজ, রেয়ন, দিয়াশলাই, প্যাকিং বাক্স ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল যোগান দেয় বৃক্ষ। আমরা জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন পাই বৃক্ষ থেকে। আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষায় গাছের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। গাছ থেকে আমরা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পেয়ে থাকি। বন থেকে আমরা প্রতিবছর ৪ লক্ষ মেট্রিক টন আসবাবপত্রের কাঠ এবং ১২ লক্ষ মেট্রিক টন জ্বালানি পেয়ে থাকি। আমাদের অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক জীবনে এসব কাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া পশু-পাখির জীবনধারণ নির্ভর করে বৃক্ষের উপর। সুতরাং বলা যায়, আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশের জন্য গাছপ্পলা ও বন-বনানীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা

আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ভরপুর। বাংলাদেশ এমন মায়াবী রূপ ফুটিয়ে তোলার প্রধানত হচ্ছে দেশের গাছপালা। বাংলাদেশ নানা প্রজাতির গাছ বিদ্যমান। দেশের পরিবেশ রক্ষায় গাছের কোন তুলনাই হয় না। গাছ হচ্ছে প্রাকৃতিক বায়ু ফিল্টার, যা কার্বন-ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য দূষক শোষণ করে এবং বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ত্যাগ করতে থাকে। এর কারণে মানুষ ও প্রাণি সকলেই বেঁচে আছে। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাতে গাছের অবদান রয়েছে অনেক। গাছ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, গাছ শহুরে হিট আইল্যান্ড প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। গাছ শহরের ভবন এবং ফুটপাতের অতিরিক্ত তাপ শোষণের ফলে শহরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অনুভব হওয়া। তাই শহরে গাছ রোপণের গুরুত্ব একটু বেশি। আমাদের উচিত খালি জায়গা পেলে গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া। কেননা, একমাত্র আমাদের গাছ লাগানো পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।

পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের ভূমিকা

বনায়ন ও বৃক্ষরাজি প্রাণের অস্তিত্বের জন্যই প্রয়োজন। বনায়নের কারণে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে হয়ে থাকে। বনায়ন একদিকে নিসর্গের শোভা বাড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। বনভূমি বা বনায়ন বিশুদ্ধ ও শীতল  বায়ুমণ্ডল রাখতে সাহায্য করে। যে এলাকায় বা দেশে গাছপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে ভালো বৃষ্টিপাত হয় এবং পরিবেশও ভালো থাকে।

গাছের জন্য বৃষ্টিপাত হয় এবং ভূমিতে পানির পরিমাণ বাড়ে আর চাষাবাদ ও ফল-ফসল ভালো হয়। গাছপালা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, ভূমির ক্ষয়রোধ করে। ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা প্রতিরোধেও গাছপালা সহায়তা করে। পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের গুরুত্বপূর্ণ অনেকে বেশি যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশের পরিবেশগত বিপর্যয় ঠেকাতেও প্রয়োজন ব্যাপক বনায়ন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব জলাভূমি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যসহ যেকোনো বনভূমি শুধু রক্ষণাবেক্ষণ নয়, সম্প্রসারণও করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি জোরদার করা চাই। তাই আমাদের উচিত পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগাতে হবে অনেক বেশি বেশি এতে পরিবেশ ঠিক থাকবে এবং মানুষও ঠিক থাকবে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বনায়ন

সভ্যতার আদিকাল থেকেই মানুষ গাছপালা ও তৃণলতার উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। এ বৃক্ষলতাই মানুষকে খাদ্য যুগিয়েছে, বস্ত্র যুগিয়েছে, বসবাসের জন্য সুন্দর ক্ষেত্র ও পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। জীবন ও প্রকৃতির অস্তিত্ব টিকে আছে এরই উপর ভর করে। অরণ্য বা বন মানুষ ও প্রকৃতির অকৃত্রিম বন্ধু। প্রকৃতিও যেন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। অরণ্য প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে মানুষ ও প্রাণিজগৎকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই টিকে আছে বিশ্বপ্রকৃতি। এ বৃক্ষসতাই আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে। পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত বা বাতাসের আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে এ বৃক্ষই। বৃক্ষ প্রাকৃতিকভাবে বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের অবলম্বন, আশ্রয় ও বংশবৃদ্ধির নিয়ামক। জীববৈচিত্রা সংরক্ষণে বৃক্ষ বা বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশের বনভূমি

আমাদের এক সময় প্রচুর গাছপালা সংবলিত গভীর অরণ্য ছিল। বিশ্ববিখ্যাত সুন্দরবন, ঐতিহ্যবাহী মনুপুর ও ভাওয়ালের গড়, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনভূমি সবকিছু আজও আছে কিন্তু তা যেন নিষ্প্রাণ। সজীবতা, স্নিখতা ও গভীরতা হারিয়েছে আমাদের বনভূমি। ফলে আমাদের জীবন ও প্রকৃতি এক নিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। UNESCO-এর মতে, যেকোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি হিসাবেই বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৬ ভাগ।

বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণ

আমাদের সবুজ-শ্যামল বনভূমি দিন দিন উজাড় হয়ে বাংলার প্রকৃতিকে মরুময়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য নিম্নলিখিত কারণগুলো উল্লেখ করা যেতে পারে-

ক. সরকারি ও জাতীয়ভাবে বনভূমি সংরক্ষণ ও বন সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নেই।

খ. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে জমি আবাদ, আবাসস্থল ও ঘর-বাড়ির সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বনভূমি কংস করা হচ্ছে।

গ. ফারাক্কা বাঁধের ফলে নদীর নাব্যতা ও বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় বনভূমি সৃষ্টিতে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

ঘ. চোরাইপথে অবৈধ ব্যবসায়ী চক্রের কবলে পড়ে আমাদের বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

বনায়নের জন্যে করণীয়

বনভূমির অমতায় আমাদের দেশের প্রকৃতিতে নেমে এসেছে নানামুখী প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ঝড়, বন্যা, খরা, মরুকরণ ইত্যাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। বনায়নের জন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে –

ক। সরকারি ও জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে বনায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

খ। বনায়ন কর্মসূচিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।

গ। ভূনি সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সর্বাগ্রে বন বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।

ঘ। বৈধভাবে গাছপালা কাটার ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঙ। বনায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

সরকারের ভূমিকা

বনজ সম্পদকে টিকিয়ে রাখা এবং এর সম্প্রসারণের জন্য আমাদের দেশে প্রতিবছর সরকারিভাবে যে বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করা হয়, তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। সপ্তাহ, পক্ষকাল বা মাসব্যাপী এ অভিযান চলে। এ সময় পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করা হয়। সাধারণত প্রতিবছর বর্ষাকালে সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। গাছের চারা যাতে সহজে ও স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়, সেজন্য বন বিভাগ আগেই পর্যাপ্ত চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা করে। এ সময় মানুষ নিকটস্থ নার্সারি থেকে বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে গাছের চারা সংগ্রহ করতে পারে। অভিযান চলাকালে মানবজীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা ও চারা রোপণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

উপসংহার

বনায়ন যেকোনো দেশ ও জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অপরিহার্য মাধ্যম। দেশের আয়তন ও জনসংখ্যা অনুপাতে সুষ্ঠুভাবে বনায়ন না হলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। এ গাছপালা তথা বনায়নের উপর ভিত্তি করেই মানুষের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল এবং এর উপরই গড়ে উঠেছিল মানবসভ্যতা। তাই বনায়নকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তর করতে আমাদের সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।


Tags:

বাংলাদেশে বনায়ন |অথবা, পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন |অথবা, অরণ্যের শোভা |অথবা, দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর |অথবা, বনায়ন | poribesh songrokkhon bonayon rochona |পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের ভূমিকা রচনা |প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বনায়ন রচনা | পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা |  class 6 7 8 9 10 SSC HSC JSC

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url