মোবাইল সিম কার্ড কি? সিমের ভেতরের চিপ সার্কিট কি ভাবে কাজ করে?
![]() |
| সিম কার্ড |
বর্তমান বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত একটি প্রযুক্তি হচ্ছে মোবাইল সিম। আমাদের দৈনিক জীবনে ব্যবহৃত মোবাইল সিম যার মাধ্যম বিশ্বের সাথে সংযোগ এবং যোগাযোগ করতে পারি। এই সিম দিয়ে কল, ইন্টারনেট, এসএমএস, মোবাইল ব্যাংকিং সহ সব কিছুই সিম কার্ড এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু কখনও কি ভেবেছো। এই ছোট একটি টুকরোটার ভেতরে কি এমন লুকিয়ে আছে, যার মাধ্যম আমি বিশ্বের সাথে সংযোগ হতে পারছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, মোবাইল মধ্যে থাকা সিম কার্ড এ যে চিপ সার্কিট বসানো হয় সেটি আসলে কি ভাবে কাজ করে এবং আমাদের যোগাযোগ বদলে দিয়েছেন বিস্তারিত দেখুনঃ
সিম কার্ড কী?
বর্তমান বিশ্বের সাথে সংযোগ হতে আমাদের মোবাইলে যে ছোট চিপ লাগানো হয় তাই হচ্ছে সিম কার্ড। সিম (SIM) এর পূর্ণরূপ হলো Subscriber Identity Module। এটি একটি মাইক্রোচিপ সার্কিট, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর পরিচয়, ফোন নম্বর, নেটওয়ার্ক তথ্য, এবং এনক্রিপশন কী সংরক্ষণ করে রাখা হয়। সহজ কথায় বললে, সিম কার্ড আপনার মোবাইল ফোন পরচয়পত্র এটি ছাড়া নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে না।
সিমে ভেতরে যে চিপ সার্কিট থাকে, তা আসলে কী করে?
সিম কে একটি মিনি কম্পিউটার সিস্টেম বলা যেতে পারে। এই সিম কার্ডের ভেতরে থাকা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC Chip)-টি এর মধ্যে থাকে তিনটি প্রধান অংশঃ
👉 Processor (প্রসেসর): এটির মধ্যে ফোন তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে, নেটওয়ার্কের সাথে নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
👉 ROM (Read Only Memory): এই অংশে থাকে অপারেটিং সিস্টেম ও নিরাপত্তা তথ্য যা সঠিক ভাবে যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করে।
👉 EEPROM (Electrically Erasable Programmable Read-Only Memory):
এখানে সংরক্ষিত থাকে আপনার কন্টাক্ট নম্বর, টেক্সট মেসেজ, IMSI (International Mobile Subscriber Identity) এবং Authentication Key।
এই চিপ সার্কিটই আপনার মোবাইলকে মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে এবং নিরাপদ ডেটা ট্রান্সফার নিশ্চিত করে।
সিম কার্ড কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে?
সিমে থাকা একটি গোপন এনক্রিপশন কী (Key) যা শুধুমাত্র সিম অপারেটর কোম্পানি ও সিম জানে। যখন আপনি সিম দিয়ে কল, ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তখন এই এনক্রিপশন কী ব্যবহজর করে সিগন্যাল পাঠায়। এর ফলে তৃতীয় পক্ষ ডেটা পড়তে পারে না। এই ভাবে সিম কার্ড নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সিম কীভাবে কাজ করে?
👉 আপনি ফোনে সিম ইন্সটল করে অন করলে সিম তার IMSI নম্বর টি টাওয়ারে পাঠায়।
👉 টাওয়ার সিম এর IMSI নম্বরটি অপারেটর সার্ভারে পাঠায়।
👉 সার্ভার আপনার সিমে থাকা তথ্য যাচাই করে এবং যদি সঠিক হয়, তাহলে সার্ভার থেকে সিগন্যাল ফিরিয়ে দেয়।
👉 এরপর থেকে আপনি নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে যান — এখন কল, এসএমএস, ইন্টারনেট সব চালু হয়ে যায়।
বিঃদ্রঃ এই ধাপগুলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে, কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল এবং উচ্চ নিরাপত্তা-নির্ভর।
সিম চিপ তৈরি হয় কী দিয়ে?
সিমের বর্ড তৈরি করা হয় প্লাস্টিক দিয়ে আর সিম চিপ তৈরি করা হয় মূলত সিলিকন (Silicon) দিয়ে। যা ইলেকট্রনিক সার্কিটের প্রধান উপাদান। এর ওপরে থাকে গোল্ড এর লেয়ার, যা সংযোগকে স্থিতিশীল করে এবং সিগন্যাল ট্রান্সমিশন উন্নত করে। সেজন্যই সিমের ধাতব অংশে আপনি সোনালি রঙ দেখতে পাওয়াই।
সিম কার্ডের প্রকারভেদ
সিম কার্ড সাধারণ পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে। কিন্তু বহুল পরিচিত হলো Nano SIM। এর প্রকার গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
✅ Full-size SIM (1FF) – পুরনো ফরম্যাট, এখন আর ব্যবহৃত হয় না।
✅ Mini SIM (2FF) – সাধারণত “স্ট্যান্ডার্ড সিম” নামে পরিচিত।
✅ Micro SIM (3FF) – আধুনিক স্মার্টফোনে ব্যবহৃত।
✅ Nano SIM (4FF) – বর্তমানে সবচেয়ে ছোট এবং জনপ্রিয় ফরম্যাট।
✅ eSIM (Embedded SIM) – ফিজিক্যাল নয়, ফোনের মধ্যেই ইন্টিগ্রেটেড। এটি ভবিষ্যতের সিম প্রযুক্তি বলা হয়ে থাকে।
সাধারণ কিছু প্রশ্নঃ
💠 বিশ্বের প্রথম ১৯৯১ সালে সিম কার্ড তৈরি করেছিল Giesecke & Devrient (জার্মানি)।
💠 সিম কার্ডে প্রায় ৬৪ কিলোবাইট পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।
💠 বর্তমানে eSIM প্রযুক্তি ব্যবহারে একাধিক অপারেটর প্রোফাইল একই ফোনে রাখা সম্ভব।
💠 ভবিষ্যতে iSIM (Integrated SIM) আসছে, যা ফোনের চিপের মধ্যেই স্থায়ীভাবে থাকবে।
সিম কার্ডের আর কিছু তথ্য
এই ছোট্ট সিম কার্ডের ভেতরে প্রায় ৫০০০টির বেশি ট্রানজিস্টর থাকে! সিম কার্ডে লুকিয়ে আছে একটি মিন কম্পিউটার, যা শুধু আপনার পরিচয বহন করে না, এর সাথে এনক্রিপশন, সিকিউরিটি, অথেনটিকেশন আর বেশ বিছু পরিচালনা করে।
এক বার ভেবে দেখেছেন কি, এত ছোট একটি চিপ কীভাবে পুরো বিশ্ব জগৎতে সাথে সংযুক্ত করে — এটাই আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়।
সিম সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: সিম কার্ডের ভিতরের চিপ কী উপাদান দিয়ে তৈরি?
উত্তর: সাধারণত সিলিকন ও সোনার পাত ব্যবহার করে এই চিপ তৈরি হয়।
প্রশ্ন ২: সিম কার্ড ছাড়া ফোন চালানো সম্ভব কি?
উত্তর: হ্যাঁ, Wi-Fi ব্যবহার করে কিছু কাজ করা যায়, কিন্তু কল বা মোবাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া যায় না।
প্রশ্ন ৩: eSIM কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: eSIM হলো একটি ইলেকট্রনিক সিম, যা ফোনের মধ্যে ইন্টিগ্রেটেড থাকে। এটি ফিজিক্যাল সিম ছাড়া নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: ভবিষ্যতে কি ফিজিক্যাল সিম বন্ধ হয়ে যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক দেশ ইতিমধ্যেই eSIM প্রযুক্তিতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে iSIM সবকিছুকে আরও সহজ করে দেবে।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।
comment url