অর্থই অনর্থের মূল ভাবসম্প্রসারণ | বাংলা ২য় পত্রের অর্থই অনর্থের মূল ভাবসম্প্রসারণ | কৌণিক বার্তা
অর্থই অনর্থের মূল ভাবসম্প্রসারণ মানুষ কখনো কখনো অল্প কথায় মনের ভাব প্রকাশ করে । এই ভাবকে ঠিক রেখেই এর সম্প্রসারণ করতে হয় । ভাবসম্প্রসারণ অনেকটা ভাবার্থের বিপরীত । কোনো পদ্যাংশ বা গদ্যাংশের ভেতর একটি গূঢ় তাৎপর্য অত্যন্ত স্বপ্নায়তনে থাকে । তাকে বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করার নামই ভাবসম্প্রসারণ। ইংরেজিতে এটিকে Amplification বা Explanation of idea বলে । অর্থই অনর্থের মূল ।
সুতরাং যে ভাব বা Idea সংক্ষেপে বা ইঙ্গিতে করা হয়েছে , তাকেই বিস্তৃত করে প্রকাশ করাকে ভাবসম্প্রসারণ বলা হয় ।
ভাব - সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়মাবলি অনুসরণযোগ্য :
১ . প্রদত্ত চরণ বা গদ্যাংশটি একাধিকবার মনোযোগসহকারে পড়তে হবে । লক্ষ্য থাকবে প্রচ্ছন্ন বা অন্তর্নিহিত ভাবটি কী , তা সহজে অনুধাবন করা ।
২ . অন্তর্নিহিত মূলভাবটি কোনো উপমা , রূপক - প্রতীকের আড়ালে আছে কিনা তা বিশেষভাবে লক্ষ করতে হবে । মূলভাবটি যদি রূপক প্রতীকের আড়ালে প্রচ্ছন্ন থাকে , তবে ভাব - সম্প্রসারণের সময় প্রয়োজনে অতিরিক্ত অনুচ্ছেদ - যোগে ব্যাখ্যা করলে ভালো হয় ।
৩ . মূলভাবকে বিশদ করার সময় সহায়ক দৃষ্টান্ত , প্রাসঙ্গিক তথ্য বা উদ্ধৃতি ব্যবহার করা সংগত । এমনকি প্রয়োজনে ঐতিহাসিক , পৌরাণিক বা বৈজ্ঞানিক তথ্যও উল্লেখ করা যায় । তবে ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য , উদ্ধৃতি দেওয়ার চেয়ে না দেওয়াই ভালো ।
৪. সহজ - সরল ভাষায় , সংক্ষেপে ভাবটি উপস্থাপন করা উচিত । প্রয়োজনে যুক্তির দ্বারা তাৎপর্যটি উদ্ধার করতে হবে ।
মূলভাবঃ পার্থিব জীবনে অর্থের প্রয়োজন সর্বাধিক হলেও পৃথিবীতে অধিকাংশ অন্যায় ও অঘটনের উৎস হলো অর্থ। এই কারণে বলা হয় অর্থই অনর্থের মূল।
সম্প্রসারিত ভাবঃ জীবনধারণের জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। জীবনের সীমাহীন অভাব পূরণের জন্যে প্রয়োজন অর্থের। অর্থ ছাড়া মানুষের জীবন একেবারেই অচল। তাই মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপার্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং নানা প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে। বর্তমান সমাহে একমাত্র অর্থের মাপকাঠি দ্বারাই প্রতিপত্তি ও সম্মান নির্ণীত হয়। প্রখ্যাত সাহিত্যির মীর মশাররফ হোসেন বলেছেন, “জন্মমাত্র টাকা, জীবনে টাকা, জীবনান্তেও টাকা, জগতে টাকারই খেলা।” আবার এ অর্থই পৃথিবীর সমস্ত অমঙ্গলের জন্য দায়ী। অর্থের লোভে নীতি বিসর্জন দিয়ে মানুষ অহরহ দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। কেননা মানুষের অর্থলিপ্সার কোনো শেষ নেই। সীমহীন অর্থলালসা মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটনা। অর্থের লোভেই মানুষ নানা প্রকার সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় পৃথিবীর যত দ্বন্দ, অশান্তি ও সংঘাতের মূল কারণ অর্থ-সম্পদের স্বার্থেই রাষ্ট্রের - রাষ্ট্রে যুদ্ধের উন্মাদনা জাগে, শ্রমিক - মালিকে দেখে দেয় মতবিরোধ এবং ভাইয়ে ভাইয়ে শুরু হয় চরম শত্রুতা। অর্থের লোভাই মানুষ মানুষের খুন করে। সমাজে ঘুষ, দুর্নীতি, রাহাজানি, কালোবাজারি কিংবা চোরাচালানির মতো জঘন্য কাজগুলো সংঘটনের পেছনে রয়েছে মানুষের অর্থলিপ্সা। অর্থই মানুষের সমস্ত অধঃপতনের কারণ। তাই মীর মশাররফ হোসেন দুঃখ করে বলেছেন,“হায় রে পাতকী অর্থ!তুই জগতে সকল অনর্থের মূল।”
মন্তব্যঃ যে অর্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য, সে অর্থই বসে আছে পৃথিবীর সকল অন্যায়, অপকর্ম ও অনৈতিকতার মূলকেন্দ্রে। তাই “অর্থ অনর্থের মূল” কথাটি চরম বাস্তব ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।