রচনাঃ চরিত্র (১৬ পয়েন্ট) চরিত্র ও মানব জীবন রচনাঃ চরিত্রই সম্পদ রচনা JSC SSC HSC 2023
“চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ। স্বকীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুণে সমাজজীবনে শ্রদ্ধাভাজন ও সমাদৃত হয়ে থাকেন রচনা সকল শ্রেণির জন্য দেওয়া হলো এসএসসি, এইচএসসি, জেডিএস, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণিন জন্য সহজ ভাবে লেখা হয়েছে। ” চরিত্র / জীবনগঠন ও চরিত্র / চরিত্র ও মানব-জীবন / চরিত্রই সম্পদ / সৎ চরিত্র রচনা। আদর্শের উৎকর্ষবাচক গুণ বােঝাতে চরিত্র শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ‘চরিত্র’ রচনাঃ চরিত্র ১৫ পয়েন্ট JSC SSC HSC
‘চরিত্র’
ভূমিকা
চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ। চরিত্রবান ব্যক্তি স্বকীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুণে সমাজজীবনে শ্রদ্ধাভাজন ও সমাদৃত হয়ে থাকেন।
প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক স্যামুয়েল স্মাইলাম তাঁর নিবন্ধে বলেছেন— “The crown and glory of life is character.” চরিত্র মানুষকে ন্যায়, সত্য, সংযম ও শ্রদ্ধাবোধ শিক্ষা দেয় এবং সৎপথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।
কাজকর্ম, কথায়-চিন্তায়, ওঠা-বসায়, আচার-আচরণে প্রতিটি ক্ষেত্রে পূতপবিত্র ভাবকেই সচ্চরিত্র বলে। সুন্দর চরিত্র মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। মানুষ অন্য কোনো গুণের অধিকারী না হলেও চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্য সমাজে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। একমাত্র চরিত্রগুণেই মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত' বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
চরিত্র কি / চরিত্র কাকে বলে
চরিত্র শব্দটি ইংরেজি ‘Character’ শব্দের প্রতিশব্দ হলেও মূলত তা এসেছে গ্রিক থেকে। আদিতে এর অর্থ ‘চিহ্ন’ হলেও প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে থেকে শব্দটি ব্যক্তির আচরণ ও আদর্শের উৎকর্ষবাচক গুণ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একজন মানুষের আচরণ ও আদর্শগত বৈশিষ্ট্যকে চরিত্র বলে।
মানুষের চরিত্রের দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য রয়েছে কেউ সচ্চরিত্র, কেউ দুশ্চরিত্র। যে মানুষের চরিত্র নানা মহৎ ও সৎগুণের আধার, তিনি সচ্চরিত্র। আর কারও চরিত্র লুকানাে পশুত্বের আধার হলে সেই চরিত্রই দুশ্চরিত্র। সচ্চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি সমাজের শ্রেষ্ঠ অলংকার। চরিত্রকে জীবনের মুকুট বলা হয়। মুকুট যেমন সম্রাটের শােভা বর্ধন করে, তেমনি চরিত্রও মানবজীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সততা, নীতিনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, সহৃদয়তা, সংবেদনশীলতা, ক্ষমা, উদারতা, ধৈর্য, কর্তব্যপরায়ণতা, গুরুজনে ভক্তি, মানবিকতা, আত্মসংযম ইত্যাদি সচ্চরিত্রের লক্ষণ। যিনি চরিত্রবান তিনি কখনাে ন্যায়-নীতি, আদর্শ ও সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হন না, দুর্নীতি ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না।
তিনি সযত্নে ক্রোধ, অহংকার, রূঢ়তা ইত্যাদিকে পরিহার করেন। তিনি হন সত্যবাদী, সংযমী ও ন্যায়পরায়ণ। যাবতীয় মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে বলে চরিত্রবান মানুষ জাতির সম্পদ।
“চরিত্র / জীবনগঠন ও চরিত্র / চরিত্র ও মানব-জীবন / চরিত্রই সম্পদ / সৎ চরিত্র রচনা। আদর্শের উৎকর্ষবাচক গুণ বােঝাতে চরিত্র শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ‘চরিত্র’ রচনাঃ চরিত্র (১৫ পয়েন্ট) JSC SSC HSC”
চরিত্রের বৈশিষ্ট্য
মানুষের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন গুণাবলী যেমন সত্যবাদিতা, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, শৃঙ্খলা, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, সাহসিকতা ইত্যাদি একত্রে মিলিত হয়ে কোনো ব্যক্তি হয়ে উঠে চরিত্রবান। চরিত্রের রয়েছে এমন একটি লৌকিক ক্ষমতা যা মানুষের মনকে সংকীর্ণতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিয়ে করে তোলে উদার, শত লোভ লালসায় চাপা পড়া মনুষ্যত্বকে টেনে বের করে দান করে পূর্ণতা। মানুষের নশ্বর জীবনকে গৌরবময় করে তোলে সচ্চরিত্র। চরিত্র গঠিত হয় সব মানবিক গুণাবলীর সমন্নয়ে আর এর বহিঃ প্রকাশ ঘটে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে।
সচ্চরিত্র লক্ষণ
চরিত্রগুণেই মানুষ হয়ে ওঠে শ্রেষ্ঠ, চরিত্র বলেই মানুষ হয় মহত্ত্বের অধিকারী। সমস্ত ঈর্ষা-বিদ্বেষ, অন্যায়- অহমিকাবোধ ও দাম্ভিকতা থেকে মুক্ত ব্যক্তিই সমাজে চরিত্রবান বলে বিবেচিত হয়। চরিত্রবান ব্যক্তি কখনো সত্য থেকে খণিত হন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না, কোধে আত্মহারা হন না, কারও সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেন না। কারও প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করেন না। উজ্জ্বল চরিত্রবান ব্যক্তি সদালাপী, বিনয়ী ও জানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। আল্লাহকে ছাড়া সে আর কাউকে ভয় করে না।
সচ্চরিত্রের গুরুত্ব ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- "When wealth is lost nothing is lost, when health is lost Something is lost, but when character is lost everything is lost."
সৃষ্টিজগতে বুদ্ধি বা আকার-আকৃতির স্বাতন্ত্র্যের জন্যই কবল মানুষ শ্রেষ্ঠ নয়, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেই সে শ্রেষ্ঠ । ধনবল ও বাহুবল অপেক্ষা চরিত্রবল অনেক অনেক মহত্তর। চরিত্রবান ব্যক্তি কখনো কোনো পাশবিক শক্তির কাছে মাথা নত করতে পারে না। চরিত্রবান ব্যক্তি উন্নত হন না প্রতিশোধ গ্রহণে, ক্রোধে নিষ্ঠুর হন না, আত্মগৌরবে হন না আত্মহারা। জীবনে অর্থ-সম্পদ যেকোনো মুহূর্তে হারিয়ে বা ফুরিয়ে যেতে পারে কিন্তু মানুষের চরিত্রের সদগুণ "হারাবার বা ফুরাবার নয়। চরিত্রবান মানুষ অর্থশূন্য হলেও সম্মানশূন্য হন না। কিন্তু একজন বিত্তশালী মানুষ মানেই সম্মানীয় নয়।
চরিত্র গঠনের সঠিক সময়
চরিত্র মানুষের মান মর্যাদা নিরূপণের মাপকাঠি। হঠাৎ করেই একজন মানুষ সৎ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন র্দীঘ প্রচেষ্টা। মানুষের চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া মূলত শুরু হয় শিশু কাল থেকেই। শিশুদের মনে যে ছাপ পড়ে তাই সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়। শিশুরা তাদের চারপাশের মানুষজনদের কাছ থেকে যেসব আচরণ শিখে তাই তাদের চরিত্রে ফুটে উঠে। তাই বড়দের উচিত শিশুদের উন্নত চরিত্র তৈরির জন্য যথাযথ শিক্ষা প্রদান করা। শিশুকালে চরিত্র গড়ে না উঠলে পরবর্তী পর্যায়ে তা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে একজন মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করলে জীবনের যেকোনো পর্যায়েই তার ক্রটিগুলো সংশোধন করে নিয়ে সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে পারে।
চরিত্র গঠনের উপায়
পরিবার চরিত্র গঠনের আদর্শ বিদ্যাপীঠ। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের স্তর অনুযায়ী শিশুর চরিত্র বিকশিত হয়। তাই চরিত্র গঠনের জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে একটি আদর্শ পরিবার। পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে, পারস্পরিক আচার-আচরণ ও রীতিনীতির ভেতরে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে শিশুর চরিত্র। প্রতিবেশী ও সহচরদের মাধ্যমেও চরিত্র গঠিত হয়। যে কারণে বলা হয়- "সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে" কিংবা "সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ"। পরিবেশের প্রতিকূলতার পাপের পঙ্কিল পথে পা বাড়ানো অয়াভাবিক নয়। তাই বাল্য বয়সেই শিশুর চরিত্র গঠনে মনোযোগী হতে হবে। দীর্ঘ সাধনার দ্বারা চরিত্র গঠিত হয়। লোভ-লালসা ও কুপ্রবৃত্তির প্রলোভনে মানুষ পাপের পথে পরিচালিত হতে পারে। এসব পাপ পথ সতর্ক ও দৃঢ়চিত্তে পরিহার করে লোভকে জয় করার শক্তি অর্জন করে চরিত্রবানের আদর্শকে মশাল হিসেবে জ্বালিয়ে উন্নত জীবনের সাধনায় নিযুক্ত হলেই সচ্চরিত্র গঠনে এগিয়ে যাওয়া যায়। চরিত্র গঠনে ধর্মের প্রভাব অনেকাংশে অসত্য ও অন্যায় থেকে বিরত থাকতে প্রেরণা যোগায়।
চরিত্র বিনির্মাণে পরিবারের অবদান
একটি শিশু জন্মের পর পরিবারের সদস্যরা তাকে আদর-যত্ন দিয়ে বড় করে তোলে, এ পৃথিবীর বুকে নির্ভয়ে পথ চলতে শেখায়। পরিবারই মানুষের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। একজন মানুষের চরিত্র বিনির্মাণে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা পরিবারের বড়দের আচার-আচরণ অনুকরণ করে। তাই পরিবারের সদস্যদের চরিত্রের প্রভাব ব্যাপক ভাবে শিশুদের উপর ক্রিয়াশীল হয়।
মহামানবের আদর্শ
পৃথিবীতে যে সমস্ত মহামানব প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন সচ্চরিত্রবান। মহাপুরুষগণ আপন চরিত্রবলে জগতে অসাধ্যকে সাধন করে গেছেন, অসম্ভবকে করেছেন সম্প্র। কোনো প্রলোভনই তাঁদেরকে বিচ্যুত করতে পারে নি ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে। তাঁরা সংগ্রাম করে গেছেন অন্যায়, অসত্য ও পাপের বিরুদ্ধে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স), হযরত ঈশা (আ), গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মহাপুরুষগণ চরিত্র বলে বিশ্ব ইতিহাসে মহান ব্যক্তি হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। যিনি চরিত্রবান তিনিই মানবশ্রেষ্ঠ, সমগ্র মানবজাতির তিনি ভূষণস্বরূপ। তিনিই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের চরিত্রে মানবের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আমরাও তাঁদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়ে উঠতে পারি। কবি বলেছেন-
“এমন জীবন তুমি করিবে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।”
চরিত্র গঠনে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা
চরিত্র গঠনে পরিবার ও পরিবেশের ভূমিকা থাকলেও সেই সাথে প্রয়োজন ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা। চরিত্র হঠাৎ করেই অর্জন করা যায় না। চরিত্র বিনির্মাণে প্রয়োজন ব্যক্তির আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সাধনা। সমাজের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা অন্যায়-অসত্য। পাপ পঙ্কিলতা তার কুটিল জাল নিপুণভাবে বিস্তার করে রেখেছে মানুষের জীবন চলার পথে। তাই চরিত্র গঠনে মানুষকে সকল লোভ-লালসা, কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে উঠতে হয়। জাগতিক সকল অন্যায় অসত্যের মোকাবিলা করে সকল পাপাচার পায়ে মারিয়ে জীবনের পথ পাড়ি দিতে হয়। তাহলেই একজন মানুষ সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে পারে।
জাতীয় উন্নয়নে চরিত্র গঠনের অবদান
যে দেশের মানুষের নৈতিকতা দূর্বল সে দেশে দুর্নীতি, ঘুষ, চুরি, অবৈধ দখলদারীর আগ্রাসন অনেক বেশি। ব্যক্তির নৈতিকতা ও উন্নত চরিত্রের অভাব গোটা দেশকেই নিয়ে যায় অবনতির দিকে। এরূপ দেশে আইন হয়ে যায় অন্ধ, জাতি আটকে পড়ে দুর্নীতির কালো থাবায়। সমস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবসা হয়ে পড়ে অকেজো। চরিত্রহীন ব্যক্তিরা দেশ ও জাতির কথা বিবেচনা করে না। সবছিুর ঊর্ধ্বে তাদের স্বার্থ। এসব হীণমন্য লোক তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে দেশের বিরাট ক্ষতি করতেও দ্বিধা বোধ করে না। চোরাকারবারি, কালোবাজারি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে। বিশ্বের কাছে নিজের দেশকে হেয় প্রতিপন্ন করে। কিন্তু যারা চরিত্রবান তারা নিজের স্বার্থ দেশের কল্যাণে জলাঞ্জলি দিতে পিছপা হয় না। দেশ ও জাতির উন্নতিই একজন চরিত্রবান লোকের কাছে পরম আকাক্সক্ষার বিষয়। তাই দেশের অগ্রগতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি চরিত্রবান জাতি গড়ে তোলা।
চরিত্র গঠনের তাগিদ
হাদিস শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে— “তাবারাকু বি আখলাক্বিল্লাহ" অর্থাৎ আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহর গুণাবলি ব্যক্তিগত জীবনে রূপায়ণের মাধ্যমে সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়া যায়। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্মেই সচ্চরিত্র গঠনকে প্রাধান্য দিয়ে এ সম্পর্কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মানুষকে প্রকৃত অর্থে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য চরিত্র গঠনের বিকল্প নেই। আভিজাত্য বা বংশ পরিচয়ে মানুষের মর্যাদা বাড়ে না, মহৎ গুণাবলির জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়।
চরিত্রের মূল্য
চরিত্র মানুষের মহার্ঘতম বস্তু, শ্রেষ্ঠতম অলংকার। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) বলেছেন— "সবচাইতে পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার আখলাক অর্থাৎ চরিত্র সর্বাপেক্ষা উত্তম।" সৎ চরিত্র অন্য সব সম্পদ অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। চরিত্র গৌরবে বলীয়ান মানুষ পৃথিবীতে বিরাজ করে দেবতার মহিমায়। চরিত্রবান ব্যক্তি সমাজের শিখাষরূপ। সে অর্থসম্পদে দীন হলেও গৌরবে মহান। কথায় আছে—"রাজার জোর অর্থের আর চরিত্রবান ব্যক্তির জোর হৃদয়ের"। হৃদয়িক মহিমায় উজ্জ্বল চরিত্রবান ব্যক্তি সদালাপী, বিনয়ী ও জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। পক্ষান্তরে চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সদৃশ। সে সৌরভবিহীন পুষ্পের মতো। তাই কেউ তাকে সম্মান করে না। চরিত্র বলেই মানুষ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে।
সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে চরিত্রের অবদান
মানব সভ্যতা ও সমাজ যতই এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে মানুষ ততই হয়ে উঠেছে বিবেকশূন্য। দিন দিন মানুষ হারাচ্ছে তার মানবীয় গুণাবলী, হয়ে পরছে চরিত্রহীন। বর্তমান অসুস্থ উচ্ছৃখল সমাজের প্রধান কারণ মানুষের চরিত্রহীনতা। উন্নত চরিত্রের অভাব সমাজকে করে তুলছে অশান্ত। তাই প্রতিদিনই ঘটছে হত্যা, ছিনতাই, ইভটিজিং, ধর্ষণের মতো ঘটনা। বেড়ে যাচ্ছে মাদকাসক্তির প্রবণতা। কিছু সংখ্যক চরিত্রহীন মানুষের জন্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পুরো সমাজের ভারসাম্য। সমাজকে সুস্থ ধারায় প্রবাহিত করতে এবং সমাজ থেকে সব কদর্যতা দূর করতে সচ্চরিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। চরিত্রবান মানুষদের এমন শক্তি থাকে যা দিয়ে সহজেই তারা অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা তাদের সদিচ্ছা, সৎ চিন্তা ও সৎ কর্ম দ্বারা বদলে দিতে পারে পুরো সমাজকে। দূরীভূত করতে পারে সব অন্যায় অবিচার।
চরিত্রহীনতার কুফল
মানবের স্বর্গসম্পদ একমাত্র চরিত্র। যার চরিত্র নেই, তার কিছুই নেই। সে সকলের ঘৃণার পাত্র। মানবসমাজে তার স্থান নেই। সে মানুষ নামের অযোগ্য। কেউ তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে না। চরিত্রহীন ব্যক্তির বিদ্যাবুদ্ধি, ধন প্রভৃতি যতই থাকুক না কেন, কিছুতেই সে মানুষের মন জয় করতে পারে না। চরিত্রহীন মানুষ অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চরিত্রহীন ব্যক্তির জীবন পঙ্কিলতা পূর্ণ হয়। এদের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না ফলে সমাজের চোখে এরা হয়ে থাকে কীট-পতঙ্গ সাদৃশ্য। চরিত্রহীন ব্যক্তি কেবল তার নিজের জীবনকেই কলঙ্কিত করে না। গোটা সমাজ ও জাতিকেই কালিমায় ঢেকে দেয়। চরিত্রহীন মানুষেরা যে সমাজে বাস করে সে সমাজ নানা অন্যায় ও কদর্যতায় ভরে যায়। সমাজের অন্যান্য মানুষরাও তাদের মান-মর্যাদা নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকে। এই চরিত্রহীনতা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের শান্তি নষ্ট করে। বুদ্ধি-বিবেকহীন ব্যক্তি পশুপ্রবৃত্তির বশীভূত হয়ে যেমন ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি সাধনকেই সারজ্ঞান করে, তেমনি চরিত্রহীন ব্যক্তি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গোটা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চরিত্রহীন মানুষ জাগতিক জীবনেই শুধু ঘৃণিত নয় মহান আল্লাহর কাছেও তার জন্য করুণার দ্বার রুদ্ধ।
উপসংহার
মানুষ তার শারীরিক সৌন্দর্য আরও আকর্ষণীয় এবং মধুময় করতে যেমন সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করে, তেমনি চৰিত্ৰ অলংকার হিসেবে এক অনুপম সৌন্দর্যের বিকাশ সাধন করে। মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে যাথ্য, অর্থ এবং বিদ্যা। জীবনে এগুলোর যতই অবদান থাকুক না কেন, এককভাবে এগুলোর কোনোটিই মানুষকে সর্বোত্তম মানুষে পরিণত করাতে সক্ষম নয় । যার পরশে জীবন ঐশ্বর্যমণ্ডিত হয় এবং যার বদৌলতে মানুষ সমাজজীবনে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে আদৃত হয়ে থাকে, তাই চরিত্র। মানুষ হিসেবে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই চরিত্রবান হতে হবে।
কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে চাইলে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ। |
বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা
সবগুলো অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ ড় ঢ় #
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।