বাংলা রচনাঃ নদীর তীরের দৃশ্য রচনা | নদীতীরে সূর্যাস্ত

নদীর তীরের দৃশ্য রচনা | Sunset on the river bank Rochona | nodir tire surjasto rochona bangla
নদীতীরে সূর্যাস্ত দৃশ্য


নদীতীরে সূর্যাস্ত দৃশ্য

বাংলা রচনাঃ নদীর তীরের দৃশ্য রচনা | নদীর তীরে সূর্যাস্ত রচনা | বাংলা রচনা নদীতীরে সূর্যাস্ত | Sunset on the river bank Rochona | Nodirtire Surjasto Rochona | nodir tire surjasto rochona bangla

বিষয়ঃ এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার |JSC SSC HSC Class 6 7 8 9 10


ভূমিকা

গোধুলির আবিরে রাঙা অস্তায়মান লাল সূর্য। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপে সন্ধ্যার রবি ধারণ এক মোহনীয় দৃশ্য। সন্ধ্যার অস্তপ্রায় সূর্যের সে দৃশ্য স্থানভেদে আমাদের হৃদয়ে ছুঁয়ে যায় অপার আনন্দের পশরা। আর তা যদি হয় নদীতীরে, সে শোভা সত্যিই অসাধারণ ও মুগ্ধকর। সে সৌন্দর্য সত্যিই আমাদের মনে দাগ কেটে যায়।

সন্ধ্যালগন

সারাদিন আলো বিলিয়ে কর্মক্লান্ত সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে প্রকৃতির দিগন্তে হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়, ধারণ করে লাল বর্ণ তখনই সন্ধ্যালগন শুরু হয়। এক সময় ক্লান্ত সূর্য দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে লুকিয়ে যায় দিগন্ত রেখার নিচে, এ সময়ই পৃথিবী জুড়ে সন্ধ্যা নামে। সূর্যের লাল রেখা তখনো পশ্চিমাকাশের সাদা মেঘের সাথে খেলে বিদায় আলিজান, যেন প্রকৃতির রঙে সেজে নববধূ যায় শ্বশুর বাড়ি- বিদায় রৌদ্রতপ্ত পৃথিবী, লও রাত্রির সুশীতল স্নেহের পরশ। কবির ভাষায়-

"দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরা এ ছায়া ভুলালো যে ভুলালো মোর সব।"

সূর্যাস্ত দেখার আদর্শ স্থান

সূর্যাস্তের দৃশ্য সর্বোৎকৃষ্টভাবে উপভোগের অন্যতম শর্ত হলো আকাশ ও আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়া। আর এরূপ আবহাওয়ায় সূর্যাস্ত দেখার আদর্শ স্থান হলো নদীতীর। গ্রীষ্মের মেঘমুক্ত পশ্চিমাকাশে অস্তায়মান সূর্যের স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে অদৃশ্য হবার দৃশ্য নদীতীরে নয়নাভিরাম হয়ে ফুটে ওঠে।

আমার দেখা নদীতীরে সূর্যাস্তের দৃশ্য

আমি তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। বার্ষিক পরীক্ষার পর বন্ধের সময়টুকু কাটাতে মামা বাড়ি বেড়াতে গেলাম। মেঘনা নদীর পাড়েই মামাদের বাড়ি। বিকেল বেলা মামাত ভাই শরীফের সাথে হাঁটতে হাঁটতে নদীতীরে চলে এলাম। পাড়ে বসে বাদাম খাবার ফাঁকে ফাঁকে গল্প করছিলাম আর দেখছিলাম, আশপাশের মানুষজনের ঘরে ফেরার তাড়ায় এলোমেলো চলাফেরা, অদূরের বিল থেকে পানকৌড়ি, মাছরাঙা, বকসহ অসংখ্য পাখি শিকার শেষে পাশার জলের ফোঁটা ফেলে দ্রুত নিজ নিজ ঘরে উড়ে যাওয়া, গবাদিপশুদের গুটিয়ে নিয়ে রাখালের ঘরমুখী হওয়া। প্রকৃতির সর্বত্র একটা বিশ্রাম, একটা প্রশান্তির হাওয়া। নদীর উত্তাল তরঙ্গমালা অশান্ত যেন এক অবোধ শিশু। মেঘনা নদীর প্রখর খরস্রোতধারায় তীর ভাঙার দৃশ্য দেখে মনে পড়ে মরমী কবির সেই অমোঘ বাণী- 

"নদীর এপাড় ভেঙ্গে ওপাড় গড়ে, এই তো নদীর খেলা।" 

আশ্চর্য হয়ে দেখছিলাম- বহমান স্রোতের টানে কী ভয়ঙ্কর আবর্ত তৈরি হচ্ছে, ঘোলা জল পাক খাচ্ছে। যৌবনের উদ্যম বেগে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে পালতোলা নৌকার বহর। এক অপূর্ব রক্তিম আভায় রঞ্জিত পশ্চিমের আকাশ। সূর্যের পূর্বেকার প্রখর দীপ্তি নেই, আছে চতুর্দিক উদ্ভাসিত করা এক স্নিগ্ধ জ্যোতি; যে জ্যোতি চোখ ঝলসানো নয়, নজরকাড়া। যে সৌন্দর্য শুধুই ছিল কল্পনায়, চোখের সামনে তা হলো মূর্তিমান। আর এ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই হয়ত কবি লিখেছিলেন-

"খুঁজিনি কিছুই আমি যতবার এসেছি এ তীরে
নীরব তৃপ্তির জন্য আনমনে বসে থেকে ঘাসে
নির্মল বাতাস টেনে বহুক্ষণ ভরেছি এ বুক।"

অদূরে আম্রকাননের অন্তরালে ছোট ছোট কুটির কম্পমান আলো ও ছায়ায় এক অপূর্ব শ্রী ধারণ করেছে। দিবসের পূর্বাহ্নে যে দীনতা ছিল প্রস্ফুটিত, অপরাহ্নে সূর্যের স্নিগ্ধ আলোয় তা মুছে গিয়ে রূপান্তরিত হয়েছে গ্লানিহীন পরিপূর্ণতায়। শান্ত, স্নিগ্ধ নদীবক্ষ যেন তার স্বচ্ছ জলে প্রকৃতির সুষমামণ্ডিত এ স্বর্গীয় দৃশ্য সযতনে অঙ্কন করেছে, আর মাঝে মধ্যে রক্তিম ক্ষুদ্র তরঙ্গাঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে নদীর জলে ছড়িয়ে পড়ছে সৌন্দর্যের এক অপূর্ব শোভা।

সন্ধ্যামুদ্ধ মন

নদীতীরে সূর্যাস্তের সৌন্দর্যময় প্রকৃতির শোভা মানব-মনকে করে দারুণভাবে আলোড়িত। সে মুখতা তাকে করে বিহ্বল, পাগলপ্রায় চিরন্তন ভাবুক। কেউবা তুলির আঁচড়ে, কেউবা কবিতার ছন্দে, কেউবা ভাটিয়ালির সুরের নানা বিচিত্র রঙে রাঙিয়েছে সন্ধ্যাকে। লাল সূর্যের আভা পশ্চিমাকাশে যেমন করে তিলক পরিয়ে দেয় তেমনি করে মানুষের মনে এঁকে দেয় অনুভূতির চমৎকার রেখা। সন্ধ্যার সে রূপের মহিমা জল নিয়ে ফেরা কুলবধূকে করে উন্ননা। কখনোবা তার পায়ে এঁকে দেয় কলমি দানা কিংবা মনে জাগিয়ে তোলে মনমাঝির স্মৃতিময় কণ্ঠ। এমনি হাজারো রূপে মনে দোলা দিয়ে যায় সন্ধ্যার ছন্দময় লগ্ন। কবির কথায়-

"দিনের আলো নিভে এলো সূর্য ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ করেছে চাঁদের লোভে লোভে।"

মনের দর্পণে প্রতিক্রিয়া

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ সৌন্দর্যের পূজারি। সৌন্দর্যের রহস্যময়তা প্রতিটি মানব-মনেই প্রভাব ফেলে, কারো কম, কারো বেশি। নদীতীরে সূর্যাস্তের সন্ধ্যার সম্মোহনী সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ কবি জসীমউদ্‌দীনের অপূর্ব অভিব্যক্তি-

"ছুঁয়ে দাও আসি সুঞ্চি জড়িমা, ফুটিছে রজনীগন্ধ্যা ক্লান্ত দেহের শাস্তি দায়িনী, চিত্ততোষিণী সন্ধ্যা।"

উপসংহার

নদীতীরে সূর্যাস্ত দৃশ্যের চমৎকার শোভা নয়নে আনে তৃপ্তি, হৃদয়ে আনে প্রশান্তি। এ দৃশ্য যে দেখে নি সে ধারণাও করতে পারবে না এর অপরূপ ভাব তরঙ্কোর মহিমা। এর প্রশান্ত ভাব, অপরূপ শোভা অপরাহ্নের এ সময়কে দান করে অপূর্ব এক সঞ্জীবতা। মনে হয় এ কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মে স্রষ্টার তরে আরাধনার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। পৃথিবী 'পরে নদীতীরে সূর্যের এ.শেষ হাসি আমি খুব ভালোবাসি-

"ভালোবাসি ভালোবাসি তোমায় যে ভালোবাসি শূন্য এ জীবনে তোমার এ হাসি।"


এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url