বাংলা রচনাঃ বাংলাদেশের নদ নদী রচনা | নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ

বাংলাদেশের নদ নদী রচনা | নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ | বাংলাদেশের নদ নদী class 5 | বাংলাদেশের নদ নদী উপকারিতা| নদীর অপকারিতা |bangladesher nod nodi rochona | Bangladesh river Rochona | Class 4 5 6 7 8 9 10 HSC SSC JSC

বাংলাদেশের নদ নদী রচনা | নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ | bangladesher nod nodi rochona
বাংলাদেশের নদ নদী

বাংলাদেশের নদ নদী

{সংকেত: ভূমিকা, বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা, নদীর প্রকৃতি, নদীর রূপময়তা, নদীর গতিপথ, বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদ, নদী ও কৃষি, নদী ও শিল্প, মৎস্য সম্পদ, নৌ চলাচল ও পরিবহন, জল বিদ্যুৎ উৎপাদন, নদী ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদীর অপকারিতা, নদীর অপকারিতা, উপসংহার।}

ভূমিকা

"সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমারই কথা ভাবি এ বিরলে।".

এভাবে স্বদেশ হতে বহু দূরে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে বসে বাংলা সাহিত্যের প্রতিভাধর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর জন্মস্থান যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। কপোতাক্ষ নদের মতো আরও অসংখ্য নদ-নদী বাংলাদেশকে জালের মতো বিস্তার করে আছে। এসব নদ-নদী হতে আহরণকৃত হরেকরকম মাছের কারণে আমরা মাছে ভাতে বাঙালি নামে খ্যাত। এদেশের নদ-নদী যে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও পরিচয়ের অন্যতম ধারক-বাহক সেটা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা

বাংলাদেশের নদীগুলোর অধিকাংশই উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত। মোট প্রায় ২৪,১৪০ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে বাংলাদেশের নদীগুলো ৪টি নদী প্রণালী বা নদী ব্যবস্থায় বিভক্ত। যথা:

১। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ২। গঙ্গা-পদ্মা ৩। সুরমা-মেঘনা ও ৪। চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীসমূহ।

গঠন ও প্রবাহ বৈশিষ্ট্যে বাংলাদেশের নদীগুলো কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যথা:- প্রধান নদী, উপনদী, শাখা নদী, স্বাধীন নদী ও নদী মোহনা। বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীগুলোর উৎপত্তি ভারত।

নদীর প্রকৃতি

অসংখ্য নদ-নদী বিস্তার করে আছে বাংলাদেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে। উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলাদেশের নদ-নদী আন্তর্জাতিক নদী, শাখানদী, আন্ত-নদী প্রভৃতি নামে পরিচিত। সংখ্যায় প্রায় ২৩০টির মতো নদী এদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। কোনো কোনো নদী দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল হতে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। আবার কোনোটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল হতে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হয়েছে। কোনোটি শান্ত প্রকৃতির আবার কোনোটি খরস্রোতা নদী। আন্তর্জাতিক সীমারেখা নির্ধারণের পাশাপাশি প্রধান নদীগুলো এদেশকে ভিন্ন ভিন্ন জনপদে বিভক্ত করেছে। আকৃতির দিক থেকেও নদীগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ। কোনোও নদী প্রশস্ত, কোনোটি আবার সরু হলেও দীর্ঘ। বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর দৈর্ঘ্য নিম্নরূপঃ পদ্মা , মেঘনা, যমুনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র।

নদীর গতিপথ

বাংলাদেশে নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা প্রভৃতি প্রধান নদী হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, কর্ণফুলী, তিস্তা, করতোয়া, কুশিয়ারা, সুরমা, গড়াই, কপোতাক্ষ, চিত্রা, মধুমতিসহ আরও অনেক নদী এদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভারতের গঙ্গা নদী রাজশাহীর কাছ দিয়ে পদ্মা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গঙ্গা নদীর মূল উৎপত্তিস্থল হিমালয় পর্বত। ফরিদপুরের গোয়ালন্দের কাছে এসে পদ্মা যমুনা নদীর সাথে মিশেছে। পরবর্তীতে যমুনা প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের কাছে এসে মেঘনা নদীর সাথে মিশে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তিস্থল ভারতের তিব্বতে। আসামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদ বাংলাদেশে এসে পড়েছে এবং এর একটি শাখা যমুনা নাম ধারণ করেছে। নদীটির অন্য শাখা ব্রহ্মপুত্র নামে ময়মনসিংহ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা, তিস্তা, ধলেশ্বরী প্রভৃতি ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী হিসেবে পরিচিত। ভারতের আসামে সুরমা নদীর উৎপত্তিস্থল। যা ভৈরববাজারে এসে মেঘনা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কর্ণফুলী নদী প্রবাহিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার উপর দিয়ে যা খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত। কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে।

নদীর রূপময়তা

নদ-নদী বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম প্রধান আধার। ষড়ঋতুর এই দেশে নদীগুলো বিভিন্ন সময় বিচিত্র রূপ ধারণ করে। গ্রীষ্মে নদীগুলোর শুকিয়ে যাওয়া, বর্ষায় টইটুম্বুর জলরাশি, শরতে নদীর তীরে ফুটে থাকা কাশফুল আর শীতে নদীর উপর ধুম কুয়াশার চাদর নদীগুলোকে বহুরূপী করে তোলে। গ্রীষ্মের করুণ দশা কাটিয়ে বর্ষায় নদীগুলো যখন খরস্রোতা হয়ে ওঠে, তখন এসব নদীর শক্তিমত্তা অনুভব করা যায় পূর্ণভাবে। শরতের নির্মল রাতের আকাশে পূর্ণ চাঁদের আলোয় কাশফুলের সমারোহ যে কতটা মনোমুলকর তা কে না জানে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার রূপ সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করার লক্ষ্যে বহুদিন বজরা নিয়ে পদ্মানদীতে ঘুরে।

বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী

বাংলাদেশে অধিক সংখ্যক নদী থাকার কারণে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। এজন্য এদেশের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর নদীর প্রভাব রয়েছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলী বাংলাদেশের প্রধান নদ নদী। এ নদ নদীগুলোর উপনদী ও শাখা নদী রয়েছে। নিম্নে প্রধান নদ নদীর বর্ণনা দেয়া হলো-

পদ্মা নদী

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী পদ্মা। এর দৈর্ঘ্য ৩৬৬ কি.মি.। এটি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মধ্যদিয়ে গঙ্গানদী পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মা নদী রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার দৌলদিয়ায় যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুরে মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

মেঘনা নদী

ভারতের মনিপুর রাজ্যের নাগা মনিপুর পাহাড়ের পাদদেশে মেঘনা নদীর উৎপত্তি। উৎপত্তি স্থলে এর নাম বরাক। বরাক নদীটি বাংলাদেশের অদূরে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানার ভিতর দিয়ে পৃথকভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কালনী হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করে। এরপর চাঁদপুরে পদ্মার সাথে মিলিত হয়ে আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। মনু, খোয়াই মেঘনার প্রধান শাখা নদী এবং গোমতী, তিতাস, ডাকাতিয়া মেঘনার উপনদী।

ব্রহ্মপুত্র নদী

এ নদ হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে তিব্বতের উপর দিয়ে পূর্ব দিকে ও পরে আসামের ভিতর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। অতঃপর ব্রহ্মপুত্র কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধরলা ও তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের প্রধান উপনদী এবং বংশী ও শীতলক্ষ্যা প্রধান শাখা নদী।

যমুনা নদী

যমুনা নদী তিব্বতের কৈলাশ শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়েছে। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্রের শাখা যমুনা নদী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে দৌলতদিয়ার কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মা নাম ধারণ করে দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। করতোয়া ও আত্রাই যমুনার প্রধান উপনদী। যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরী আর ধলেশ্বরীর শাখা নদী বুড়ি গঙ্গা।

নদী ও কৃষি

কৃষি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি। কৃষি প্রধান বাংলাদেশের চাষাবাদ ব্যবস্থা অনেকটাই নদীর সেচ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। কেননা আমন ধান কাটার পর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজতলা তৈরি করে ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে বোরো ধান রোপণ করা হয়। এ সময় বোরো মৌসুমে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না বিধায় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত জোয়ারের সময় নদীর পানি দিয়ে সেচ প্রদান করা হয়। এজন্য কৃষির উন্নয়নে নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নদী ও শিল্প

বাংলাদেশ ধীরে ধীরে শিল্পায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্প কারখানাগুলো বিভিন্নভাবে নদীর পানি ব্যবহার করে। এছাড়া নদী পথে কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে খরচ কম হওয়ায় বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় বড় শিল্প কারখানা নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।

মৎস্য সম্পদ

নদীমাতৃক এ দেশটি স্মরণাতীতকাল থেকে মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধশালী। আর তাইতো বাঙালিকে বলা হত ‘মাছে ভাতে বাঙালি।’ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মৎস্যখাত ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ছিল ৫.৫২ শতাংশ। বাংলাদেশে নদীতে ইলিশ, পাঙাশ, রুই, কাতলা, বোয়াল, পাবদাসহ বিভিন্ন ধরণের মাছ পাওয়া যায়।

নৌ চলাচল ও পরিবহন

নদী পরিবহন সবচেয়ে সস্তা ও সহজ পরিবহন ব্যবস্থা। বাংলাদেশে নদী পরিবহন দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে ২টি প্রধান সমুদ্রবন্দর রয়েছে চট্টগ্রাম ও মংলায়। ইওডঞঈ দেশের ৬০০০ কি.মি নৌপথে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে থাকে। নদী পথে পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার প্রভৃতি পরিবহন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জল বিদ্যুৎ উৎপাদন

বাংলাদেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্ণফুলী নদীতে অবস্থিত যা কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে পরিচিত। খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে ১৯৬২ সালে স্থাপিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এ কেন্দ্রটি দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সামান্য হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

নদী ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

নদী পথে সুলভে যাতায়াত করা যায়। বাংলাদেশে সারাবছর নৌ চলাচল উপযোগী নৌপথের দৈর্ঘ্য ৫২২১ কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮৪৩৯ কিলোমিটার। বাংলাদেশে বর্তমানে ২২টি নদী বন্দর রয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ প্রধান নদীবন্দর যেটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। এছাড়া অসংখ্য নদীর উপর রয়েছে সুদৃশ্য সেতু। যেমন বঙ্গবন্ধু সেতু যা যমুনা নদীর উপর অবস্থিত। এটি বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম সেতু। তাছাড়া নির্মিতব্য পদ্মা সেতু তৈরি হলে এটি হবে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সেতু যার দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কি.মি.। এছাড়া খানজাহান আলী সেতু, লালনশাহ সেতু উল্লেখযোগ্য। বেড়িয়েছেন। আর এদেশের মাটি ও মানুষদের নিয়ে রচনা করেছেন গল্প, উপন্যাস ও কবিতা। কবি জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়ি নদী নিয়ে যে কাব্য রচনা করেছেন, তা পাঠ করে বাংলাভাষী যেকোনো মানুষ অভিভূত হয়। এদেশের পল্লিগান কিংবা আধুনিক গানেও নদীর বহমানতার কথা, নদীর কুল ভাঙ্গার কথা কিংবা প্রমত্ত ঢেউয়ের প্রসঙ্গ বারবার এসেছে।

নদীর উপকারিতা

এদেশের সিংহভাগ নদী প্রবাহিত হয়েছে সমভূমির উপর দিয়ে। এসব নদীর প্রবাহমানতা সমভূমিকে উর্বর করে তুলেছে। বর্ষায় নদীবাহিত পলি জমিগুলোকে আরও উর্বর করে তোলে। ফলে বাংলাদেশের মাটিতে কৃষিজ পণ্যের উৎপাদনের হার বেশি। নৌপথে মানুষ স্বল্প খরচে গন্তব্যে যাতায়াত ও পণ্যদ্রব্য বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। নদীগুলো হতে প্রচুর মাছ সংগৃহীত হয়। এদেশের মানুষের আমিষের চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ হয় মাছ থেকে। সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ জেলে পরিবার মাছের উপর নির্ভর করেই জীবিকানির্বাহ করে। এদেশের নদীগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

নদীর অপকারিতা

সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো এখন হুমকির সম্মুখীন। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে এদেশের প্রধান নদী পদ্মা তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। এ বাঁধের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে মরুভূমির লক্ষণ ফুটে উঠছে। নদীর দু'পাশের জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। নদীগুলো খননের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় এগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। ফলে মাছের বিচরণ ক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে। নদীগুলো সারাবছর নৌ চলাচলের উপযোগী থাকছে না। আবার বর্ষায় ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে প্রতিবছর বন্যায় লক্ষ লক্ষ একর জমির ফসল ধ্বংস হচ্ছে। মানুষের ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর চরম ক্ষতি হচ্ছে। নদী ভাঙানের কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে এবং ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

উপসংহার

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা প্রভৃতি নদী এদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই নদী দখল করে অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি এবং কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে। এতে নদীগুলো আবার স্বাভাবিক রূপ ধারণ করে এদেশের অর্থনীতিকে অধিকতর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে। নদীমাতৃক এ বাংলাদেশের নদীগুলোকে রক্ষা করা না গেলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে।

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url