পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের শরীরে বাড়ছে যেসব রোগের ঝুঁকি

বিজ্ঞাপন  Daraz 11.11 The Biggest Sale of The Year is coming Get up to 80% OFF

বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে আর জীবনের ব্যস্ততা কাছে হার মেনেছে ঘুম। এর কারণে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার প্রভাব পড়ছে শরীর ও মনে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কী সমস্যা হতে পারে সেই বিষয় বিস্তারিত জানাবে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান মোস্তফা রাশেদ

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের শরীরে বাড়ছে যেসব রোগের ঝুঁকি
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের শরীরে বাড়ছে যেসব রোগের ঝুঁকি

আমাদের শরীরের জন্য ঘুম কতটা জরুরি?

আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে ডা. হাসান মোস্তফা বলেন, আমরা ঘুমের মধ্যে কয়েকটি স্তর পার করি। এটাকে ঘুম চক্র বলে। প্রতিটি চক্র ৬০ থেকে ১০০ মিনিট হতে পারে। ঘুমের বিভিন্ন স্তর আমাদের শরীরের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলে। ঘুম চারটি স্তরে (এন১, এন২, এন৩ এবং র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম) এবং দুটি বিভাগে বিভক্ত (নন-আরইএম এবং আরইএম ঘুম)।

👉 ১. নন-আরইএম ঘুম: এটি ঘুমের সবচেয়ে হালকা পর্যায় থেকে গভীরতম পর্যায়ের দিকে অগ্রসর হওয়া, যেখানে হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং পেশীর কার্যকলাপ ধীর হয়ে যায়।
👉 ২. আরইএম ঘুম: এটি ঘুমের একটি আরও সক্রিয় পর্যায়, যা স্বপ্ন ও মস্তিষ্কের তরঙ্গের সঙ্গে যুক্ত।

ঘুমের সময় নির্দিষ্ট না থাকলে সেটি স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষকরা দেখেছেন, যারা রাতের শিফটে কাজ করেন, তারা দিনের এমন এক সময়ে ঘুমাতে যান যখন তাদের ঘুম কম হয়। ফলে তাদের ডায়াবেটিস এবং মোটা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বয়সভেদে একজন মানুষের কতক্ষণ ঘুমানো দরকার?

আমেরিকান ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতি রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে, নবজাতকের জন্য প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। এ ছাড়া, বয়ঃসন্ধিকালের আগ পর্যন্ত প্রতি রাতে ১১ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট এবং যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর তাদের প্রতি রাতে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

ডা. হাসান মোস্তফা বলেন, ঘুম কম হলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম কম হলে ক্ষুধা বাড়ে। ফলে মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ ছাড়া মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি বিভ্রম তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া মনোযোগের ঘাটতি, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, বিষণ্ণতা, যৌন দুর্বলতা ও যৌন উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়।

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, কারা বেশি রোগাক্রান্ত হয়—যারা কম ঘুমায় নাকি যারা বেশি ঘুমায়? এখানে কম ঘুমানো মানুষ বলতে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যারা রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমায়। অন্যদিকে বেশি ঘুমানো মানুষ বলতে তাদের বোঝানো হয়েছে যারা ৯ কিংবা ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমায়। মানুষ কম ঘুমানোর কারণে রোগাক্রান্ত হয় কি না সেটি বলা কঠিন। তবে যেহেতু তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা দেয়। নিদ্রাহীনতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে শরীরের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। আর বেশি ঘুমানো মানুষের মধ্যে স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার, বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপা, ক্লান্তি ও বিরক্তি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যারা কম ব্যায়াম করে তারা শারীরিকভাবে কম ফিট থাকে। ফলে যার ফলে বেশি ঘুম পায় এবং নিজেকে ক্লান্ত মনে হয়। আবার ক্লান্ত থাকার কারণে ব্যায়াম করা কমে যায়।

ঘুম কম হওয়ার কারণ ও ঝুঁকি

👉 ১. ঘুম কম হওয়ার কারণে শারীরিকভাবে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিদ্রাহীন মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়।
👉 ২. ক্যাফেইন, সিগারেট, অ্যালকোহল বা মাদক গ্রহণের কারণে ঘুমের ওপর প্রভাব পরে, যা শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বাড়ায়।
👉 ৩. দিনের বেলায় মস্তিষ্কের ভেতরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং রাতে ঘুমের মাধ্যমে সেগুলো অপসারণ হয়ে যায়। এ কারণে ঘুম কম হলে মস্তিষ্ক দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং কাজের দক্ষতা কমে যায়। 
👉 ৪. গর্ভাবস্থা ও মেনোপজের সময় হরমোনের প্রভাবে নারীদের ঘুমের পরিমাণ ও গুণগত মানের পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া মা হওয়ার পরে রাতে বাচ্চার দায়িত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়েদের ওপর পড়ে, এতে তাদের ঘুম কম হয়।
👉 ৫. মেনোপজের সময়ও নারীদের ঘুমের মান কমে যায়। এতে ঘুমের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। মাসিক শুরুর আগে নারীদের কিছুটা বেশি ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে।
👉 ৬. ঘুমের মাধ্যমে শরীরের বিপাক ক্রিয়া সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হয়। ঘুমের অভাবে এই বিপাক ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পেটের সমস্যা বিশেষত পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়।
👉 ৭. যারা ঠিকমতো ঘুমান না, তারা মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। সেক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে রাগ, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা।
👉 ৮. এ ছাড়া মনোযোগের ঘাটতি, যৌন দুর্বলতা ও যৌন উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায় পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব।


সূত্রঃ The Daliy Star

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
মন্তব্যগুলো দেখান
মন্তব্যগুলো যোগ করুণ

আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।

comment url
বিজ্ঞাপন  Daraz 11.11 The Biggest Sale of The Year is coming Get up to 80% OFF